ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবিতে লন্ডনে হাজারও মানুষের বিক্ষোভ

গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রফতানি বন্ধের দাবিতে লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে শুক্রবার (২৩ মে) স্থানীয় সময় বি‌কা‌লে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন’ (পিএসসি) আয়োজিত এই বিক্ষোভ থেকে ইসরায়েলি পদক্ষেপের নিন্দা জানানো হয় এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগে যুক্তরাজ্য জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়।

এই বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি-এর সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে তারা গাজায় ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘জঘন্য’ এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে, বিক্ষোভকারীরা যুক্তি দিচ্ছেন, কেবল কথা যথেষ্ট নয় বরং তারা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, বিশেষ করে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন।

রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিক জন রিজ জনসমক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং বলেন, ‘আমরা দাবি করি যে তারা তাদের কথাকে কাজে পরিণত করুন। ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করুন।’ পিএসসি এই মনোভাবের প্রতিধ্বনি করে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যার জড়িত থাকা বন্ধে সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ এর আহ্বান জানিয়েছে।

বিক্ষোভে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগে যুক্তরাজ্য জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়

যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রি তদন্তাধীন

ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রফতানির লাইসেন্স অনুমোদন অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে সংঘাতে ব্যবহৃত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশও রয়েছে। যদিও সরকার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিছু অস্ত্র রফতানির লাইসেন্স আংশিকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল, সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন যে ইসরায়েলে অস্ত্রের সামগ্রিক সরবরাহ আসলে বৃদ্ধি পেয়েছে।

র‍্যালিতে উপস্থিত থেকে সাবেক লেবার নেতা জেরেমি চরবিন সরকারি বক্তব্য ও নীতির মধ্যেকার বিরোধ তুলে ধরেন। তিনি ৪ জুন হাউস অব কমন্সে গাজা (স্বাধীন জন তদন্ত) বিল পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চাওয়া হবে।

কেন যুক্তরাজ্য ইসরায়েলকে সমর্থন ও অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে?

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও কেন যুক্তরাজ্য ইসরায়েলকে সমর্থন ও অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর জটিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের অবস্থান বেশ কয়েকটি কারণের সমন্বয়ে প্রভাবিত।

যুক্তরাজ্য এবং ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা, গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আর অস্ত্র ব্যবসা যুক্তরাজ্যের জন্য আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস এবং ইসরায়েল একটি বড় গ্রাহক।

বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রচারাভিযান চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করায়, যুক্তরাজ্য সরকার তার কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। আইনি চ্যালেঞ্জ এবং জনবিক্ষোভ ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক এবং চলমান সংঘাতে এর ভূমিকা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান তদন্তকে তুলে ধরছে।