ব্রাসেলস হামলা সম্পর্কে জানতেন না সালেহ আবদেসালাম

ব্রাসেলস হামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না প্যারিস হামলার মূল সন্দেহভাজন সালেহ আবদেসালাম। এমনটাই জানিয়েছেন তার আইনজীবি ম্যারি।

ম্যারি বলেন, সালেহ আবদেসালাম আমাকে জানিয়েছিলেন তিনি যত দ্রুত সম্ভব ফ্রান্স ছাড়তে চান।

এর আগে ম্যারি জানিয়েছিলেন, তার মক্কেল আবদেসালাম ব্রাসেলসের তদন্তকারীদের সহযোগিতা করছেন। তবে ফরাসি কর্তৃপক্ষের হাতে তাকে তুলে দেওয়া নিয়ে তার জোরালো আপত্তি ছিল।

গত ১৮ মার্চ সালেহ আবদেসালামকে বেলজিয়ামের একটি শহর থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের মোলেনবেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ।

সালেহ আবদেসালাম

সালেহ আবদেসালামের সঙ্গে ওই হামলার ওয়ারেন্টভুক্ত মনির আহমেদ আল হাদজ নামের আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া শহরের একই পরিবারের তিন ব্যক্তিকে তার ভরণপোষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত নভেম্বর মাসে প্যারিস হামলার পর থেকে পালিয়ে ছিলেন আবদেসালাম। গ্রেফতারের আগে ব্রাসেলসের পাশের শহরের একটি ফ্ল্যাটে আবদেসালামের আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায়। আর সেদিনই ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হলেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এরপর মোলেনবেক শহরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি হলে আবদেসালাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

২৬ বছর বয়সী আবদেসালাম ফরাসি নাগরিক হলেও দীর্ঘদিন ধরে বেলজিয়ামে বসবাস করছেন। সেখান থেকে গিয়েই তিনি প্যারিসে হামলা চালিয়েছিলেন। হামলার পর তিনি আবার ব্রাসেলসের একটি ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিলেন।

২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একযোগে কয়েকটি স্থানে আইএসের হামলায় নিহত হন ১৩০ জন। ওই হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসালামকে গত ১৮ মার্চ ব্রাসেলস থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই সতর্ক অবস্থায় ছিল বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আবদেসালামকে গ্রেফতারের মাত্র চার দিনের মাথায় জোড়া হামলায় রক্তাক্ত হয় ব্রাসেলস। একটি বিমানবন্দর ও একটি মেট্রোরেলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ৩৪ জন। আহত হন দুই শতাধিক। ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলার পর ব্রাসেলসের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ইউরোপ। হামলার দায় স্বীকার করে অনলাইনে বিবৃতি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এর চেয়েও ভয়াবহ হামলা আসছে বলেও হুমকি দিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বিবৃতিটি সঠিক হতে পারে।

২২ মার্চ ২০১৬ মঙ্গলবার ব্রাসেলসের ব্যস্ততম জাভেনতেম বিমানবন্দর ও একটি মেট্রো স্টেশনে (পাতালরেল) এক ঘণ্টার ব্যবধানে এ জোড়া হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর বেলজিয়ামে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। ইউরোপজুড়ে জোরদার করা হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।

বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এই হামলাকে ‘অন্ধ, হিংসাত্মক ও কাপুরুষোচিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘এটা বেদনার দিন; এটা একটি কালো দিন।’

ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলার পর বেলজিয়ামের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানসহ বিশ্বনেতারা।

বেলজিয়ামের শোকে সংহতি প্রকাশ করে নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ভবনে এবং প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে মঙ্গলবার রাতে বেলজিয়ামের পতাকার রঙে আলোকসজ্জা করা হয়।

/এমপি/