ব্রিটিশ রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নতুন দল গড়তে যাচ্ছেন ক্ষমতাশীন লেবার পার্টি থেকে বরখাস্ত এমপি জারাহ সুলতানা। ১৪ বছর থাকার পর দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এখন লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সহ-নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এখনও নাম চূড়ান্ত না হওয়া নতুন বামপন্থি দল ব্রিটেনের ভোটের রাজনীতিতে কোনও ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা অথবা নিজ দল থেকে সুলতানা তার কভেন্ট্রি সাউথ আসনে আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে পার্লামেন্টে আসতে পারবেন কি না, তা দেখার বিষয়।
এ দল নিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি আপসানা বেগম, জেরেমি করবিন এবং জারা সুলতানা এখনও নীরবতা বজায় রেখেছেন।
আপসানার নতুন দলে তাৎক্ষণিকভাবে যোগ না দেওয়া বা মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। তিনি যোগ দিলে পপলার এবং লাইমহাউসে তার শক্তিশালী স্থানীয় সমর্থন বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে নতুন দলটি।
যুক্তরাজ্যের বৈচিত্র্যময় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি, ব্রিটিশ-ভারতীয় এবং বৃহত্তর কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা গোষ্ঠীগুলি প্রভাব ফেলতে পারবে কি না তা দেখার বিষয়।
গত বছর দুই শিশু বেনিফিট ক্যাপের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় লেবার পার্টি থেকে বরখাস্ত জারাহ সুলতানা বলেছেন, নতুন দলটি অন্যান্য স্বতন্ত্র এমপি, প্রচারক এবং কর্মীদের নিয়ে গঠিত হবে। কল্যাণ নীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে বর্তমান সরকারের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা তার এই সিদ্ধান্তের মূলে রয়েছে। লেবার পার্টি জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেরেমি করবিন এখনও তার সহ-নেতৃত্বের চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে আইটিভি'র পেস্টন অনুষ্ঠানে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলি তার এই নতুন উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
জেরেমি করবিনের ব্যাপক ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। করবিন ও জারাহ দীর্ঘদিন লেবার পার্টিতে কিয়ার স্টারমারের বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে অনেকটা অবাঞ্ছিত অবস্থায় আছেন। আপসানা বেগমেরও একই অবস্থা। দল থেকে বহিস্কৃত না হলেও দলের মূলধারায় জায়গা হারিয়েছেন আগেই।
পূর্ব লন্ডন এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে কে বা কারা এই নতুন রাজনৈতিক শক্তিতে যোগ দেবেন, তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হবে। বেথনাল গ্রিন এবং বো-এর মতো পূর্ব লন্ডনের নির্বাচনি এলাকাগুলোতে বৃহৎ ব্রিটিশ বাংলাদেশি জনসংখ্যা রয়েছে এবং ঐতিহাসিকভাবে এগুলো লেবার পার্টির শক্ত ঘাঁটি।
একইভাবে, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি এবং ব্রিটিশ-ভারতীয় সম্প্রদায়, যুক্তরাজ্যের বৃহত্তর গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি, ঐতিহ্যগতভাবে লেবার পার্টির প্রতি উল্লেখযোগ্য সমর্থন দেখিয়েছে। তবে এই সমর্থন সমস্ত জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে একরকম ছিল না এবং সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, লেবার এই ভোটকে একটি নিশ্চিত ব্লক হিসাবে ধরে নিতে পারে না। বিশেষ করে গাজার মতো বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ-এশিয়ান, বিশেষত মুসলিম ভোটারদের মধ্যে অনুভূত পরিবর্তনের কারণে।
লেবার ঐতিহাসিকগতভাবে বহু জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য তাদের স্বার্থের সঙ্গতির কারণে প্রভাবশালী পছন্দ ছিল। ২০১৪ সালের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ব্রিটিশ-এশিয়ান, বিশেষত ব্রিটিশ-মুসলিম ভোটারদের মধ্যে ২০০৯ সালের তুলনায় সমর্থন হ্রাস পেয়েছে।
একটি নতুন, স্পষ্টতই বামপন্থি বিকল্প ভোটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করতে পারে কিনা অথবা লেবারের প্রতি গভীর আনুগত্য বজায় থাকবে কিনা তা দেখার বিষয়। এই নতুন দলের পূর্ব লন্ডনের মতো এলাকায় এই সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে প্রভাব বিস্তারের সাফল্য তার ব্যাপক নির্বাচনি প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হবে।