হামলার ক্ষত নিয়ে চালু হচ্ছে জাভেনতেম বিমানবন্দর

সন্ত্রাসী হামলার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের জাভেনতেম বিমানবন্দর আজ খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এটি সীমিত আকারে চালু করা হবে। এজন্য গতকাল মঙ্গলবার একটি অস্থায়ী চেক-ইন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দরের একজন মুখপাত্র বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, যাচাই করে দেখছেন তারা। প্রয়োজনীয় সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবারই বিমানবন্দরটি চালু হবে। তবে সেটা সর্বোচ্চ ক্ষমতার ২০ শতাংশ হতে পারে।

এদিকে ব্রাসেলসে বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল শেফু গত সোমবার ছাড়া পেয়েছেন। তার আইনজীবী অলিভিয়ে মার্তিন্স গতকাল এ কথা জানিয়েছেন। সিসিটিভির ফুটেজে যে রহস্যময় তৃতীয় ব্যক্তিকে দেখা যায়, তাকেই শেফু বলে মনে করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ওই হামলার ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত সম্ভাব্য একমাত্র সন্ত্রাসবাদী। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শেফুকে চার দিন আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে তিনি ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন। আর সে কথা মুঠোফোনের কয়েকটি কলের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে।

জাভেনতেম বিমানবন্দর।

বেলজিয়ামের আইন অনুযায়ী তদন্তকারী বিচারক কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে পারেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন।

বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বেলজিয়ামের পার্লামেন্টে। তবে সেখানে হামলার হুমকির মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এক ধাপ কমানো হয়েছে। সেখানকার একজন মুখপাত্র বলেন, তাদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতার করার পর বেলজিয়ামে হুমকির মাত্রা এক ধাপ কমানো হয়। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার থেকে আবার খুলেছে।

২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একযোগে কয়েকটি স্থানে আইএসের হামলায় নিহত হন ১৩০ জন। ওই হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসালামকে গত ১৮ মার্চ ব্রাসেলস থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই সতর্ক অবস্থায় ছিল বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আবদেসালামকে গ্রেফতারের মাত্র চার দিনের মাথায় জোড়া হামলায় রক্তাক্ত হয় ব্রাসেলস। ২২ মার্চ ২০১৬ মঙ্গলবার ব্রাসেলসের ব্যস্ততম জাভেনতেম বিমানবন্দর ও একটি মেট্রো স্টেশনে (পাতালরেল) এক ঘণ্টার ব্যবধানে জোড়া হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে নিহত হন ১২টি দেশের ৩৪ ব্যক্তি। নিহতদের মধ্যে জার্মানি, স্পেন, মরক্কো, পেরু, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিকও রয়েছেন।

জাভেনতেম বিমানবন্দরে হামলার পর ব্রাসেলসের কেন্দ্রস্থলে সেনাদের সতর্ক প্রহরা।

ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার পর বেলজিয়ামের পাশে দাঁড়ান বিশ্বনেতারা। হামলার তীব্র নিন্দা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানসহ বিশ্বনেতারা।

বেলজিয়ামের শোকে সংহতি প্রকাশ করে নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ভবনে এবং প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে বেলজিয়ামের পতাকার রঙে আলোকসজ্জা করা হয়।

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এ হামলাকে ‘অত্যন্ত জঘণ্য’ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তি অক্ষুন্ন রাখতে বেলজিয়াম ও ইউরোপ তাদের অঙ্গীকার রক্ষায় সঠিক পথেই কাজ করবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘জাতীয়তা-বর্ণ-ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বজুড়ে যারা মানুষের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে, আমরা তাদের পরাজিত করতে পারি; তাদের পরাজিত করবই।’

তিনি বলেন, ‘তারা যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করতে পারবে না। তারা কিছু সৃষ্টি করতে পারবে না। গোটা দুনিয়ার মুসলমানদের, কিংবা গোটা বিশ্বের মানুষদের দেওয়ার মতো কোনও বার্তা তাদের নেই। তারা কেবল মানুষের জন্য ভীতি তৈরি করতে পারে। তারা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অসহনীয় করে তুলতে পারে, আমাদের বিভক্ত করতে পারে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা করতে দেব, সন্ত্রাসীরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।’

ব্রাসেলস হামলায় নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করছেন এক ব্যক্তি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, আমরা কখনোই সন্ত্রাসকে বিজয়ী হতে দেব না।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সন্ত্রাসের কোনো সীমানা নেই। সন্ত্রাসীরা বিশ্বময় মানুষের জন্য হুমকি। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এদের মোকাবেলা করতে হবে।

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, এ হত্যাযজ্ঞ হৃদয়বিদারক। সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বলেছেন, ইউরোপ আক্রান্ত হয়েছে। সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ লিওপোল্ড-এর কাছে এ ফোন করে এ ঘটনায় দেশটির জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেন, ব্রাসেলসে যারা সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে, তাদের মানবিক ও নৈতিক কোনো মূল্যবোধ নেই। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।

/এমপি/