ভারতে সংখ্যালঘুদের ভুয়া ক্রসফায়ারের দায়ে ৪৭ পুলিশের যাবজ্জীবন

ভারতে ভুয়া ক্রসফায়ারে একদল সংখ্যালঘু শিখ তীর্থযাত্রীকে খুনের দায়ে ৪৭ পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কথিত ক্রসফায়ারে ১১ জন নিরপরাধ শিখ তীর্থযাত্রীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ২৫ বছর আগে উত্তর প্রদেশের পিলিভিটে ওই ঘটনা ঘটেছিল।

১৯৯১ সালের ১২ জুলাই পিলিভিটের তিনটি এলাকায় জঙ্গি নিধনের নামে ভুয়া ক্রসফায়ারে ১১ জন শিখ তীর্থযাত্রীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন এই ৪৭ জন পুলিশ সদস্য। সিবিআই-এর বিশেষ আদালত তাদের ভারতীয় দণ্ডবিধির মোট ছয়টি ধারায় দণ্ডিত করেন। সোমবার দোষী পুলিশ সদস্যদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেন বিচারক লালু সিং।

১৯৯১ সালে নানকমাতা, পটনা সাহিব, হুজুর সাহিবসহ একাধিক তীর্থস্থান ভ্রমণ সেরে ফিরছিলেন শিখ তীর্থযাত্রীরা। ১২ জুলাই সালে পিলিভিটে তাদের বহনকারী বিলাসবহুল বাস থামায় পুলিশ সদস্যরা। এ সময় ১১ জন পুরুষ যাত্রীকে বাস থেকে নামতে বাধ্য করা হয়। এরপর ঘটনাস্থলে আসেন আরও পুলিশ সদস্যরা। তারা ওই ১১ জনকে কয়েকটি দলে ভাগ করে জঙ্গলে আলাদা আলাদা স্থানে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে।

ভারতের একদল শিখ তীর্থযাত্রী। ফাইল ছবি।

ঘটনার পর পুলিশ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে পুলিশ দাবি করে, নিহত শিখরা ছিল চরমপন্থি এবং ঘটনার সময় তারা সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। ওই শিখরা প্রথম পুলিশের গুলি চালায়। পরে আত্মরক্ষার্থে পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়। এমনকি নিহতদের জঙ্গি প্রমাণে বেশকিছু অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। পুলিশ জানায়, এসব অস্ত্র নিহতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনার জেরে ভিলসান্দা, পুরানপুর এবং নউরিয়া থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে  পরে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আর এস সোধি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার বর্তায় সিবিআই-এর ওপর। পরে সিবিআই জানায়, পুরস্কার অর্জন এবং ‘সন্ত্রাসী’ হত্যার কৃতিত্ব জাহির করাই ছিল এই খুনের উদ্দেশ্য।

অনুসন্ধান রিপোর্টে সিবিআই আরও জানায়, ১২ জুলাই পিলিভিটে নিহত শিখরা আদৌ পুলিশকে আক্রমণ করেননি। তাদের নিরীহ তীর্থযাত্রী হিসেবে শনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থা। ভুয়া ক্রসফায়ারে তাদের হত্যার অভিযোগ ওঠে একাধিক থানার ওসি, সাব-ইনস্পেক্টর ও কনস্টেবলদের বিরুদ্ধে।

১৯৯৫ সালের ১২ জুন মোট ৫৭ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। ২৫ বছর ধরে মামলা চলাকালে ১০ জন অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অভিযুক্ত বাকি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এমপি/