সম্প্রতি মোস্যাক ফনসেকার প্রায় ১১ মিলিয়ন নথিপত্র ফাঁস হয়। আর এরপরই বের হয়ে আসে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাধরদের অর্থ কেলেঙ্কারির ভয়াবহ তথ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত কিভাবে কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদ গোপন করেন এবং কিভাবে অর্থ পাচার করেন; তা উন্মোচিত হয়েছে নথিগুলো ফাঁস হওয়ার পর। মোস্যাক ফনসেকা নামক আইনি প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট ফি নেওয়ার মাধ্যমে মক্কেলদের বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এর মাধ্যমে তারা সম্পদ গোপন এবং কর ফাঁকি দিয়ে ওই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ পান। এরইমধ্যে ফাঁস হওয়া নথিগুলোর তথ্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। মোস্যাক ফনসেকার বিতর্কিত ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তবে তথ্য ফাঁসের এই ঘটনাকে বেআইনি ও মানবাধিকারবিরোধী বলে উল্লেখ করেন মোস্যাক ফনসেকার প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার রামন ফনসেকা। এতে হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধের ঘটনা আড়াল হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ক্ষোভ জানান রামন ফনসেকা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত! কারণ কেউ এ ব্যাপারে বলছে না যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিশ্ব একরকম মেনেই নিয়েছে গোপনীয়তা কোনও মানবাধিকার নয়।’
বিভিন্ন খবরে জানা গেছে, গত সপ্তাহে মোস্যাক থেকে গ্রাহকদের কাছে একটি ইমেইল পাঠানো হয়েছিল। সেখানে সতর্ক করে বলা হয়, ‘আমাদের ইমেইল সার্ভারে অনুমোদনবিহীন কেউ প্রবেশ করেছে।’
এ ধরনের অনুমোদনহীন প্রবেশকারীর কাছ থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দোষারোপ করা হয়। কেবল তাই নয়, ‘অবৈধভাবে পাওয়া’ তথ্য ব্যবহারের কারণে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান গত রবিবার এক চিঠিতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে পানামা পেপারসে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতাশালী ও ধনীদের অর্থ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড-অস্ট্রিয়া-সুইডেন-নেদারল্যান্ডসসহ বেশকিছু দেশ তাদের নিজ নিজ দেশের অভিযোগ ওঠা ধনী ও ক্ষমতাশালীদের ব্যাপারে তদন্তের কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টি খতিয়ে দেখার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। ফাঁস হওয়া নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অর্থ কেলেঙ্কারির তেমন কোনও তথ্য নেই উল্লেখ করে নথিগুলোকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছে রাশিয়া। একইভাবে চীনের তরফে ফাঁস হওয়া নথিগুলোকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্তের পাশাপাশি কারও কারও বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। এরইমধ্যে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর ডেভিড গুনলাগসন পদত্যাগ করেছেন। সূত্র: বিবিসি
/এফইউ/বিএ/