এ মুহূর্তে দুনিয়াজুড়ে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম মশাবাহিত জিকা ভাইরাস। নবজাতকের মাইক্রোসেফালি এ ভয় বা আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, জিকাকে প্রথমে যতটা ভীতিকর বলে ধারণা করা হয়েছিল, ভাইরাসটি আসলে তার চেয়েও অীধক ভীতিকর।
১১ এপ্রিল ২০১৬ সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বিভাগের ড. আন্নি শুচাট। তিনি বলেন, জিকাবাহী মশা তুলনামূলক হারে বেশি দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে কোনো দেশের একটি এলাকায় জিকা শনাক্ত হলে, তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক।
'পানামা পেপারস প্রকাশ করা হয়েছে জনস্বার্থে'
তিনি বলেন, এ মশা যুক্তরাষ্ট্রের এক অঙ্গরাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে উড়ে যেতে সক্ষম। এ ভাইরাসের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমরা যা জানতে পেরেছি, তা আসলে ভরসাজনক কিছু না। এর সম্পর্কে আমরা যা জানি, এটি হয়তো তার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
গত এক বছর ধরে ব্রাজিলসহ বিশ্বের প্রায় ৩০টিরও বেশি দেশে জিকার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, ব্রাজিলে এ ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। গর্ভবতী নারীর দেহে জিকার সংক্রমণ হলে নবজাতক অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির ও অপরিপক্ক মস্তিষ্ক (মাইক্রোসেফালি) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীর আয়কর বিবরণী প্রকাশ
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষদিকে জিকা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কথা জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, মশাবাহিত এ ভাইরাস আমেরিকা মহাদেশজুড়ে ‘বিস্ফোরকের মত’ ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ে ‘চরম উদ্বেগ’ সৃষ্টি হয়েছে।
৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ এ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ভাইরাস মোকাবেলায় ডব্লিউএইচও একটি জরুরি টিমও গঠন করেছে।
পক্ষত্যাগ করে দ. কোরিয়ায় উ. কোরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা!
ডব্লিওএইচও’র মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান বলেছেন, জিকা ভাইরাস দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এবং এর প্রভাবটাও অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
২৩টি দেশসহ আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জিকা এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে চ্যান বলেন, “এর বিরুদ্ধে দ্রুতই কিছু করা প্রয়োজন।”
যুক্তরাষ্ট্রে ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মার্কোস এসপাইনাল এ ভাইরাসজনিত রোগে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে এর কোনও সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
তিনি বলেন, জিকা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা টিকা এখনো নেই। এ ভাইরাস আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই কোনও লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় রোগ শনাক্ত করাও কঠিন।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতেই জরুরি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বলেছেন ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক চ্যান। রোগ-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এ জরুরি কমিটি ভারাইসটি নিয়ে সঠিক পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করবে।
২০১৫ সালের মে মাস থেকে ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তারপর থেকে দেশটিতে অপরিণত বা ছোট মস্তিষ্কের শিশু জন্ম নেওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শিশুদের এ অবস্থাকে বলা হয় ‘মাইক্রোসেফালি’। এতে আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয় না। ফলে ওই শিশুরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে,শারীরিক বৃদ্ধি বিলম্বিত হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাঝারি মাত্রার জ্বর, চোখে প্রদাহ ও মাথাব্যাথা হয়। গর্ভবতী নারী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এডিস মশা জিকা ভাইরাস বিস্তারের জন্য দায়ী। এই মশা ডেঙ্গু রোগের ভাইরাসও বহন করে। সূত্র: বিবিসি।
/এমপি/