নওয়াজের ‘বাড়ি ফেরা’

আদালতে রায়ে অযোগ্য ঘোষণার পর পদত্যাগ করা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বুধবার ইসলামাবাদ থেকে জন্মস্থান লাহোরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। নওয়াজের এই বাড়ি ফেরা সাধারণ কোনও ঘটনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) তার এই বাড়ি ফেরাকে ‘ঐতিহাসিক বাড়ি ফেরা’ হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে শোভাযাত্রার। পথে পথে সমাবেশে বক্তব্য দেবেন নওয়াজ ও দলের নেতারা। বিরোধিরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে নওয়াজের দল ক্ষমতার প্রদর্শনী করছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন ক্ষমতাসীনরা।

598b0ec4a5625

পুলিশের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, শোভাযাত্রায় আট থেকে সাড়ে আট হাজার মানুষ অংশ নেবেন। থাকবে নয়শ থেকে সাড়ে নয়শ যানবাহন। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি যান থাকবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাব্যবস্থাও সুনিশ্চিত করা হয়েছে। শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় একটি হেলিকপ্টারও নিয়োজিত রয়েছে।

দুপুর ১২টার কিছু আগে নওয়াজ ইসলামাবাদের পাঞ্জাব হাউস ছেড়ে লাহোরের উদ্দেশে রওনা দেন। শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাওয়ালপিন্ডির বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোটেল, মোটেল ও দোকান বন্ধ রয়েছে। পেশাওয়ার, অ্যাবোটাবাদ ও ইসলামাবাদের বিভিন্ন এলাকায় শোভাযাত্রা থামিয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল নওয়াজের। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা বাতিল করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, প্রত্যাশার চাইতে মানুষের সমাগম কম হওয়ার কারণে ভাষণ দেওয়া বাতিল করেছেন নওয়াজ।

বুধবার সন্ধ্যায় শোভাযাত্রাটি ফরিদাবাদ পৌঁছায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই তা অবস্থান করছিল। এখানেই হয়ত রাত্রি যাপন করতে পারে শোভাযাত্রাটি।

শোভাযাত্রাটির বিস্তারিত পরিকল্পনা অনুসারে লাহোর পৌঁছাতে চার থেকে ছয় দিন লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তা লাহোরে পৌঁছার কথা।

নওয়াজের শোভাযাত্রাকে সফল করতে দলের সব সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান ও নেতাকর্মীদের রাস্তার পাশে জড়ো থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  গ্র্যান্ড ট্যাংক রোডে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। শোভাযাত্রার নিরাপত্তাব্যবস্থার নজরদারি করছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল। তিনি রয়েছেন শোভাযাত্রার সামনে। রয়েছে একটি ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নওয়াজ শরিফসহ রাজনীতিকদের জনগণের কাছ থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, মানুষ বিভিন্ন স্থানে নওয়াজকে থামিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন।

দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে শোভাযাত্রা লাহোর পৌঁছাবে বলেও দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

নওয়াজ এই শোভাযাত্রাকে ‘প্রতিবাদ’ বলতে রাজি নন। এটিকে শুধু ‘বাড়ি ফেরার ভ্রমণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান। তিনি এই শোভাযাত্রা করছেন কারণ ‘দেশের জন্য ঝুঁকি নিতে হয়’।

শোভাযাত্রাটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আরেকটি কারণে। শোভাযাত্রাসহ লাহোর পৌঁছেই নিজের শূন্য আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা করবেন তিনি।

গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান দাবি করেছেন, নওয়াজের লাহোর ফেরাকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে রূপ দিতে সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করছে। পিটিআই নেতা আব্দুল আলিম খান বলেন, পাঞ্জাব সরকার তাকে (নওয়াজ) সফল হিসেবে প্রমাণ করতে সব ক্ষমতা প্রয়োগ করছে।

598b0fd451a5f

মঙ্গলবার আওয়ামী মুসলিম লিগের প্রধান শেখ রশিদ অভিযোগ করেন, গ্র্যান্ড ট্যাংক সড়কে নওয়াজের এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেনাবাহিনীর কাছ থেকে জাতীয় পুনর্মিলন অধ্যাদেশ (এনআরও) চাওয়া হচ্ছে।

পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক-এর প্রধান তাহিরুল কাদরিও সমালোচনা করেছেন নওয়াজ পরিবারের। তিনি গণতন্ত্রকে অবদমিত করার অভিযোগ তুলেছেন নওয়াজ পরিবারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আপনারা কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন?

রাজনীতিক ছাড়াও সাংবাদিকদের মধ্যেও নওয়াজের বাড়ি ফেরার শোভাযাত্রাটি সমালোচনা হচ্ছে।  ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজের বাড়ি ফেরার ঘটনাকে নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হলেও প্রত্যাশ্যার চেয়ে কম মানুষের উপস্থিতি পুরো ঘটনাকে শক্তি প্রদর্শণ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়া শোভাযাত্রায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করার মতো বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক নুসরাত জাবেদ বলেন, আমি মনে করি সরকার নিজের শক্তি দেখাচ্ছে। এক লাখ মানুষ জড়ো করা কোনও ব্যাপর হওয়ার কথা না। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানুষের উপস্থিতি খুব কম। রাওয়াল পিন্ডি পৌঁছালেই আমরা বুঝতে পারব, কী পরিমাণ মানুষ উপস্থিত হবে নওয়াজকে স্বাগত জানাতে।

নুসরাত জাবেদ আরও বলেন, শোভাযাত্রাটি শুধু শক্তি প্রদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বার্তাও। তারা চেষ্টা করছে দেখাতে যে, তাদের ভোটার সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেয়নি।

উপস্থাপক অরিয়া মাকবুল জান বলেন, কেউ হয়তো তাকে (নওয়াজ) ভুল পরামর্শ দিয়েছে। তাকে বোঝানো হয়েছে, তিনি জনপ্রিয়তার চূড়ায় রয়েছেন। ইসলামাবাদের ডি-চকে মাত্র কয়েকশ মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। এ জন্যই সেখানে ভাষণ দেননি তিনি। সূত্র: ডন।

/এএ/