পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কেন পাকিস্তানে ফিরলেন নওয়াজ-মরিয়ম?

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানে ফিরেন। পাকিস্তানের মাটিতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সাজা ঘোষণার পর গ্রেফতার হবেন জেনেও কেন তারা পাকিস্তানে ফিরলেন তা পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশটির ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডন রাজনৈতিক সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে উঠে এসেছে, রাজনৈতিক অপরিহার্যতার  কারণেই দেশে ফিরেছেন তারা।

5b48ea20bc0b7

নওয়াজ ও মরিয়মকে গত সপ্তাহে অ্যাভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় যথাক্রমে দশ ও সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয় দেশটির অ্যাকাউন্টিবিলিটি আদালত। রায়ের সময় আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন তারা।

ডনের রাজনীতি বিষয়ক সাংবাদিক আদনান রসুল জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নওয়াজ ও মরিয়মের দেশে ফেরা ও গ্রেফতারে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। স্বেচ্ছায় দেশে আসা দুই ব্যক্তির জন্য এমন আয়োজন প্রয়োজন ছিল না। অথচ একই দিনে বেলুচিস্তানে শতাধিক মানুষ বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। সরকারের উচিত ছিল প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতারের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে মনোযোগী হওয়া। নির্বাচনের মাত্র দশদিন আগে এমন আচরণে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ অন্যায়ের শিকার হওয়ার যে দাবি করে আসছে তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিলো।

রসুল আরও জানান, নওয়াজ ও মরিয়মের জন্য ফিরে আসাটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিদেশে নির্বাসিত হওয়াটা ছিল নওয়াজের রাজনৈতিক জীবনে বড় ধরনের কালো অধ্যায়। এবার যখন সুযোগ পেয়েছেন তিনি তা কাজে লাগিয়েছেন। এই নিন্দা এখন আর তাকে বয়ে বেড়াতে হবে না। মরিয়মের জন্য বিষয়টি নিজেকে বেনজির ভুট্টোর মতো করে হাজির করা। উভয়ে পূর্ণ কারা মেয়াদ ভোগ করবেন কিনা তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এখনকার পিএমএল-এন ১৯৯৯ সালের দল এক নয়। এখনকার দলটি শুধু রাজনৈতিক দল নয় বরং সামাজিক পরিচিতি গড়ে তুলছে। স্বৈরাচারের হাতে দলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন তা লৌহকঠিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একমাত্র শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

ডনের সাবেক আবাসিক সম্পাদক আরিফা নুর বলেন, এটা ছিল রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা। গত ৫ বছর ধরে তারা ক্ষমতায় ছিলেন। পাকিস্তানে তাদের স্বার্থ রয়েছে। দেশে এখন সামরিক শাসন নেই। যদি তারা বিদেশে থেকে যেতেন তাহলে অনেক আইনি ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতো। নওয়াজ নিজের মেয়ে মরিয়মকে রাজনীতির উত্তরাধিকার করতে চান। ফলে তারা যদি না ফিরতেন তাহলে এসবের সুযোগ হারাতেন।

সাংবাদিক ও বিশ্লেষক জাহিদ হুসেইন বলেন, এছাড়া তাদের সামনে আর কোনও সুযোগ ছিল না। নির্বাচনে দলের জন্য ভোট চাওয়ার জন্য সময় ছিল মাত্র দশ দিন। আমি মনে করি, নওয়াজ আশা করছেন যখন রায়টি আপিলে যাবে তখন সাজা মওকুফ হতে পারে। এটাই ছিল তার জন্য সবচেয়ে ভালো সুযোগ।

শাহজায়েব খানজাদা নওয়াজ ও মরিয়মের ফেরার ক্ষেত্রে রাজনীতিতে দৃশ্যমানতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, তাদের শারীরিক গতি-প্রকৃতি খেয়াল দরকার। রাজনীতিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের দেখে মনে হয়েছে তারা দেশে ফেরার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কারণ এটা ছিল প্রয়োজনীয়। তাদের মুখের প্রতিটি প্রকাশভঙ্গিই শিরোনাম এবং বিশ্লেষণ করা হবে।

জিও নিউজের মাজহার আব্বাস বলেছেন, ১৯৯৯ সালে সৌদি আরবে চলে যাওয়ার ঐতিহাসিক ভুলটি শুধরে নিয়েছেন নওয়াজ। ফিরে এসেছে তারা জনগণের প্রতি একটি বার্তা দিয়েছেন যে, তারা সাজাভোগ করতে প্রস্তুত।