চীনা সংস্কৃতিতে ‘অন্তর্ভুক্তকরণের’ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ঘোষণা

মুসলমান অধ্যুষিত চীনের শিনজং প্রদেশে চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ পর্যায়ের নেতা ইউ কুয়ান। নৃতাত্ত্বিক ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রবেশ ঠেকিয়ে দিতে চীনা সংস্কৃতিতে ‘অন্তর্ভুক্তকরণের’ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, প্রায় দশ লাখ মানুষকে শিনজংয়ে আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে চীনা সংস্কৃতির পাঠ পড়ানোর জন্য। এসব কেন্দ্রে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে হান সংস্কৃতি বহির্ভূত জনগোষ্ঠীর মানুষ।2952

চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা জিনহুয়া জানিয়েছে, ইউ কুয়ান চীনের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলোর দেখভাল করা সংস্থার প্রধান। এ সপ্তাহেই তিনি মুসলমান অধ্যুষিত শিনজং (Xinjiang) সফর করেছেন। তার ভাষ্য, ‘ধর্মের বিষয়ে পার্টির সিদ্ধান্তকে সমুন্নত রাখতে হবে, যাতে ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।’

গার্ডিয়ান লিখেছে, চীনা সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্তকরণ বলতে চীনে আসলে অপরাপর গোষ্ঠীগুলোকে হান জনগোষ্ঠীর ধর্ম, সংস্কৃতি, পোশাক, রাজনীতি এবং ভাষা গ্রহণে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। চীনা সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্তকরণের এই প্রক্রিয়াকে মর্মান্তিক হিসেবে উল্লেখ করেছে গার্ডিয়ান। চীন শিনজং সীমান্তে উইঘুর, কাজাখ, হউই, উজবেক ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর প্রায় দশ লাখ মানুষকে আটকে রেখেছে এক বিশেষ ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।’ সেখানে তাদের চীনা সংস্কৃতি শেখানো হচ্ছে। বিবাহিত নারীদেরও সেখানে আটকে রাখা হয়েছে। মরিয়ম নামের একজন উইঘুর নারী ২০১৭ সাল থেকে চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে আটক রয়েছেন। আর তার তিন ছেলেমেয়ে মাকে ছাড়া এতদিন ধরে রয়েছে তাদের বাবার কাছে। সংশ্লিষ্ট নারীকে চীনা সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘শিক্ষা’ দিতে ধরে নিয়ে আটককেন্দ্রে রেখেছে চীন।

এমন প্রায় দশ লাখ মানুষকে আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত কেন্দ্রগুলোকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘুদের হাজত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মার্কিন কংগ্রেসের চীন বিষয়ক একটি কমিটি। চীনের এমন কাজের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাস দমনের নামে এতো লোককে এভাবে আটকে রাখার প্রক্রিয়ার অবসান ঘটাতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। চীনের বক্তব্য, দেশটি ইসলামি জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। সেজন্যই তাদের এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।