মিয়ানমারের ৪ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পেজ নিষিদ্ধ করলো ফেসবুক

মিয়ানমারের চারটি সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের পেজ বন্ধ করে দিয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়ানো বন্ধে ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে থাকা ফেসবুক সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ফেসবুকের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলছে, এটা সুবিবেচনা প্রসূত নয় এবং আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এখবর জানিয়েছে।

myanmar

মঙ্গলবার একটি ব্লগ পোস্টে ফেসবুক আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিকে ‘বিপজ্জনক সংগঠন’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। ফেসবুকের কোম্পানি আইন অনুসারে, বিপজ্জনক সংগঠন হিসেবে সহিংসতার লক্ষ্যে ও সহিংসতায় জড়িত সংগঠনকে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন- সন্ত্রাসী সংগঠন ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের চক্র। এই শ্রেণিতে অন্তর্ভূক্ত সংগঠনের কর্মকাণ্ডই যে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয় তা না, বরং এমন সংগঠনের প্রশংসা, সমর্থন ও প্রতিনিধিত্ব নিষিদ্ধ করা হয়।

নিষিদ্ধের কারণ ব্যাখ্যা করে ফেসবুক লিখেছে, এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা ও মিয়ানমারে সহিংসতায় জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আমরা চাই সেখানে উস্কানি ছড়িয়ে দিতে যাতে করে আমাদের সেবা ব্যবহার করা না হয়।

২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার উস্কানিতে ফেসবুক ব্যবহৃত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ফেসবুকের সমালোচনা করা হয়। এরপরই কোম্পানিটি দেশটির সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন সামরিক নেতার ফেসবুক পেজ বন্ধ করে। এবার চার সশস্ত্র বিদ্রোহীদের পেজ বন্ধ করায় ফেসবুকের বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধের প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপ নিয়ে আবার সমালোচনা শুরু হয়েছে।

মিয়ানমার টেক অ্যাকাউন্টেবিলিটি নেটওয়ার্কের গবেষণা উপদেষ্টা মিয়াত থু প্রশ্ন করেন, ‘কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? প্রক্রিয়াটা কী? এধরনের সিদ্ধান্তের দেখভাল কে করেন?’ তিনি বলেন, ফেসবুকে যে আরও বার্মা ভাষাভাষী কর্মী দরকার তা এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয়। ইংরেজিতে একটি ব্লগপোস্টে সঠিক তথ্য জানান দেয় না।

এক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই চারটি বিদ্রোহী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলো এবং তা সরকারের জন্য বড় অগ্রগতি।

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের ক্যাম্পেইন সমন্বয়কারী নায় সান লুইন বলেন, এই চার সংগঠনের প্রশংসা, সমর্থন ও প্রতিনিধিত্ব যখন ফেসবুক নিষিদ্ধ করেছে তখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেও এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

দক্ষিণ এশীয়ার মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস’র ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ফেসবুকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে সহিংসতার লক্ষ্য যাদের আছে সেই সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ কি তাহলে সব সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হবে? অথবা শুধুই বি-রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী? মিয়ানমারে কয়েক ডজন বি-রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী রয়েছে। ফেসবুক কি তাদের সবাইকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে? কোম্পানিটি আমাদের জানায়নি ঠিক কোন কারণে এই চারটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, অন্যদের করা হয়নি।