দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মহড়ায় থাকছে মিয়ানমার

দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সাত আশিয়ান দেশের সামুদ্রিক সামরিক মহড়ায় অংশ নেবে মিয়ানমার। সোমবার দেশটির নৌবাহিনী জানিয়েছে, থাইল্যান্ড উপসাগরে পাঁচ দিনের এই মহড়ায় তারা অংশ নেবে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এ খবর জানিয়েছে।

Capture

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোয়ে অং ভিন্ন নামে ফেসবুকে এক পোস্টে সোমবার সকালে  জানিয়েছেন, আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিতে ফ্রিগেট এফ-১২ নামের যুদ্ধজাহাজ ১০০ জন ক্রু নিয়ে ইয়াঙ্গুন ছেড়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দৈনিক পত্রিকা মিয়াবতি ও দেশটির নৌবাহিনীর ফেসবুক পেইজের খবর অনুসারে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুন অং কিয়াউয়ের নেতৃত্বে একটি দল নৌমহড়ায় অংশ নেবে। ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই মহড়ায় অন্তত সাতটি আসিয়ান দেশ অংশগ্রহণ করবে।

আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক প্রভাব কমিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবেই মহড়াটির আয়োজন করা হয়েছে।

এর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগে মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে উভয় দেশের সামরিক মহড়া বিতর্কিত এবং মার্কিন নীতিবিরোধী হয়ে পড়ে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১১ লাখে।

জুলাই মাসে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে পূর্ব-পরিকল্পিত রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার প্রায় দুই বছর পর বর্মি সেনাবহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল রাখাইনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইরাবতির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ইমেইলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি যোগাযোগ করলে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, চূড়ান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন চলছে এবং মহড়ার দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় দেশটির সরকারের ওপর শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ছে। সোমবার নতুন করে শীর্ষস্থানীয় একাধিক মার্কিন আইনপ্রণেতা এক বিবৃতিতে এমন একটি আইনের প্রস্তাব করেছেন, যাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম সহিংসতার জন্য মিয়ানমার সরকারকে নতুন নিষেধাজ্ঞার চাপে ফেলা যায়। একইসঙ্গে এ ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ট্রাম্প প্রশাসনকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।