কাশ্মির ইস্যুতে ভারত-চীন 'কথার যুদ্ধ'

কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল এবং দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা নিয়ে কূটনৈতিক কথার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ভারত ও চীন। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জম্মু-কাশ্মির রাজ্যকে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।

download

৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয় দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় দুনিয়ার ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা। এ পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও চীন দুই মাস ধরে ভারত সরকারের কাশ্মির নীতির তীব্র সমালোচনা করে আসছে।

বৃহস্পতিবার লাদাখের গভর্নর হিসেবে শপথ নিয়েছেন আর কে মাথুর এবং জম্মু-কাশ্মিরের গভর্নর হিসেবে শপথ নেন গিরিশ চন্দ্র মার্মু। দুটি কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল সরাসরি দিল্লির নিয়ন্ত্রণে শাসন করা হবে। ভারতের কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রাজ্যগুলোর চেয়ে কম স্বায়ত্তশাসন পায়। সাবেক জম্মু-কাশ্মির রাজ্যটি ছিল বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বিরোধপূর্ণ এবং সামরিকায়িত অঞ্চল। ভারত ও পাকিস্তান পুরো কাশ্মিরকে নিজেদের দাবি করলেও উভয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র একাংশতে।

পুরো কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ দাবি করা পাকিস্তান এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। ইসলামাবাদের মিত্র চীন কয়েক দশক ধরে ভারতের সঙ্গে কাশ্মিরের লাদাখ অঞ্চল নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে আছে। দেশটিও ভারতের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। ভারত ও চীনের এই কূটনৈতিক কথার যুদ্ধ উভয় দেশের রাষ্ট্রনেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের কয়েকদিন পর শুরু হলো। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে কয়েকদিন পূর্বেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তামিল নাড়ুতে মিলিত হয়েছিলেন।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, কাশ্মির বিরোধ ঐতিহাসিকভাবে বিরাজ থাকার অর্থ হলো তা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তথাকথিত জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। লাদাখের কিছু এলাকা চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। এর মধ্যদিয়ে চীনের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এটি ভয়াবহ ও অকার্যকর। এর ফলে সত্যিকার অর্থে চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের কোনও পরিবর্তন হবে না।

গেং শুয়াং আরও বলেন, চীন এই পদক্ষেপের দৃঢ় বিরোধীতা করে। ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত চীনের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

ভারত ও চীন ১৯৬২ সালে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এরপর থেকেই উভয় দেশের সীমান্ত বিরোধ চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চীনের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং দাবি করেছেন কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং নয়া দিল্লির সিদ্ধান্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে রাভিশ কুমার বলেন, আমরা চাইনা চীনসহ অপর দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করুক। যেমন ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে।

চীনের জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে বেইজিংয়ের নীতির সমালোচনা করা থেকে বিরত থেকে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উইঘুর ও মোসলমানদের আটক রাখা বন্ধ করার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দিল্লি। এছাড়া উত্তর ভারতে নির্বাসিত তিব্বতীয় আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগও ফিরিয়ে দিয়েছে।

রাভিশ কুমার বলেছেন, চীন অবৈধভাবে লাদাখসহ কাশ্মিরের একাংশ দখল করেছে। এমনকি পাকিস্তানের কিছু ভূখণ্ডও অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বেইজিং।