আফগানিস্তান ছাড়ছে না ন্যাটো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তালেবানের সঙ্গে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের মে মাস নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং অন্যান্য সব বিদেশি শক্তি আফগানিস্তান ছাড়বে। তবে বৃহস্পতিবার ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গ ইঙ্গিত দিয়েছেন, এখনই আফগানিস্তান ছাড়ছে না ন্যাটো।

জেন্স স্টোলটেনবার্গ সাংবাদিকদের জানান, আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের একাধিক দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে যৌথ বাহিনী কবে আফগানিস্তান ছাড়বে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তা মেনে চললে ১ মে’র মধ্যে ন্যাটো বাহিনীর চলে যাওয়ার কথা। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা এই সামরিক জোটের দাবি, তালেবান ওই চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলেনি। ফলে সেনা সরানোর মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।

হোয়াইট হাউজে নিজের মেয়াদের শেষ দিকে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই আফগানিস্তান ছাড়বে মার্কিন সেনারা। তখনও এর সঙ্গে একমত হতে পারেনি ন্যাটো।

ন্যাটো বলছে, যৌথ বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সেনা যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের সরিয়ে নেওয়া হলে এতদিনের মিশন বিফল হবে। এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলে ছিটকে পড়েন ট্রাম্প। জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেই আফগানিস্তান নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আটকে দেন।

ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন স্টোলটেনবার্গ। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, পশ্চিমা দেশগুলো বহু বিষয় নিয়ে চিন্তিত। দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটো আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপন এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেছে। এজন্যই সেখানে যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। গত দুই দশকে লাখ লাখ ডলার অর্থ খরচ হয়েছে। এখন যদি দ্রুত সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে মিশন সফল হবে না। এতদিনের পরিশ্রম বিফলে যাবে। সে কারণেই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

ন্যাটো প্রধানের বক্তব্য, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের শান্তি চুক্তি সই হয়েছিল। সেখানে ২০২১ সালের ১ মে’র মাধ্যমে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল। তালেবান জানিয়েছিল, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। দেশে যাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বিষয়েও তারা আগ্রহ দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। গত ডিসেম্বরে কাবুলে শেষ বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটায় তালেবান। এতে মৃত্যু হয় ডেপুটি গভর্নরের। তারপরেই মার্কিন ফোর্স প্রত্যাহারের বিষয়টি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

ন্যাটো বলছে, দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি এখনও আসেনি। শান্তিও সুরক্ষিত হয়নি। ফলে আপাতত ফোর্স সরানো হবে না।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ন্যাটো প্রধানকে সমর্থন করেছেন। ডিডব্লিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এখন সেনা সরিয়ে নিলে ইউরোপে জঙ্গি হামলার শঙ্কা আরও বেড়ে যাবে। ফলে আপাতত সেনা সরানোর প্রশ্নই ওঠে না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশই আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত হয়েছে। সেজন্য যৌথ বাহিনী কাজ চালিয়ে যাবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সমাধানও খোঁজা হবে।

এদিকে ১ মে’র মধ্যে ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান না ছাড়লে তালেবান ফের আক্রমণাত্মক ভূমিকায় ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ন্যাটো প্রধান জানিয়েছেন, সেই আশঙ্কা মাথায় রেখেই পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।