মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের লাশের জন্যও টাকা নিচ্ছে সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে নিহত বিক্ষোভকারীদের মরদেহ নিতেও সেনাবাহিনীকে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে নিহতদের স্বজনদের। গত শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডবে নিহতদের লাশের জন্য জনপ্রতি ৮৫ ডলার করে নিচ্ছে তারা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় সাত হাজার ১৮৯ টাকা। অ্যাক্টিভিস্টদের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গড়ে তোলা ব্যারিকেড অপসারণ করতে গিয়ে শুক্রবার মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় বর্মি বাহিনী। পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, এদিন অন্তত ৮২ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের মরদেহ নিতে এখন অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বজনদের।myanmar 04

বাগো ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-এর এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার নিহতদের মরদেহের জন্য নিহতদের স্বজনদের কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার কিয়াত (৮৫ ডলার) করে নিচ্ছে সেনাবাহিনী। একই রকমের খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার বার্মিজ সার্ভিস। তবে সিএনএন-এর পক্ষে স্বতন্ত্রভাবে বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এএপিপি জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আটক করে রাখা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। তবে জান্তা সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এ সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা ২৪৮ বেসামরিক এবং ১০ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনা রেকর্ড করেছে।myanmar 05

শুক্রবারের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন বিক্ষোভকারীদের একজন সংগঠক ইয়ে হিট। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার এবং আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়ে নজর রাখছে। অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং আহতদের জন্য মেডিক্যাল টিমগুলোকে কাজের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করতে বাগো শহরের রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের শহরটিতে শুক্রবার সন্ধ্যা নামার আগেই অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।myanmar 03

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগো শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের মানুষেরা বুঝতে পেরেছিলো তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) আসতে পারে। আর এজন্য রাতভর অপেক্ষা ছিলো। সেনাসদস্যরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আমরা মর্টার শেলও পেয়েছি। মেশিনগান দিয়েও প্রচুর গুলি করা হয়েছে। তাজা গুলি ছাড়াও সেনাসদস্যরা গ্রেনেড লাঞ্চার ব্যবহার করেছে।’ এখন সেদিনের ঘটনায় নিহতদের লাশ হস্তান্তরের জন্যও স্বজনদের কাছে অর্থ দাবির খবর আসছে। সূত্র: সিএনএন, এক্সিওস, ডিডাব্লিউ।