সিঙ্গাপুরে দেড় মাস পর করোনায় প্রথম মৃত্যু

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে দেড় মাস পর প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৮ বছরের ওই নারী কোভিড জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সিঙ্গাপুরে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১।

গত ১৪ এপ্রিল ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ২৮ এপ্রিল তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। শনিবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই নারীর ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, কনজেসটিভ কার্ডিয়াক ফেইলিউর, স্ট্রোক এবং হাইপারলিপিডেমিয়া ছিল।

ওই রোগী হাসপাতালে যে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানে আরও আটজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্য একটি ওয়ার্ডে আরও একজন কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। দুই চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্যসেবা সহকারী প্রশিক্ষণার্থী এবং একজন ক্লিনারও আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে গত ১৩ মার্চ সর্বশেষ দেশটিতে করোনায় একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৬১ বছর।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ২৩৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে কোভিড আক্রান্তদের বেশিরভাগই অভিবাসী শ্রমিক। তাদের অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একই কক্ষে গাদাগাদি করে থাকে। লাখ লাখ শ্রমিক সেখানকার নির্মাণ শিল্প, শিপিং এবং রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে। অর্থনীতি সচল রাখতে সিঙ্গাপুরকে এদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

যেসব জায়গায় এই অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করে বা থাকে, তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। আইন অনুয়ায়ী এই শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট কিছু হোস্টেল বা ডরমিটরিতে থাকতে হয়। বেসরকারিভাবে পরিচালিত এসব অনেক ডরমিটরিতে এক ঘরে ১২ জন পর্যন্ত শ্রমিক থাকে। এরা বাথরুম, রান্নাঘর এবং আরো অনেক কিছু শেয়ার করে। ফলে, এসব শ্রমিক ডরমিটরি যে করেনাভাইরাসের ক্লাস্টারে পরিণত হবে, তা বলাই বাহুল্য, এবং হয়েছেও তাই। আক্রান্তদের বেশিরভাগই এসব শ্রমিক ডরমিটরির বাসিন্দা।

কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকানোর যুদ্ধে সবচেয়ে প্রশংসিত দেশগুলোর একটি অবশ্য সিঙ্গাপুর। এমনকি এই রোগের যখন নামকরণও করা হয়নি, তখনই সিঙ্গাপুরে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের উপসর্গ বহনকারীদের ব্যাপারে অন্যদের সাবধান করার কাজ শুরু হয়।

ভালো কী হচ্ছিল?

সিঙ্গাপুরে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় একেবারে গোড়ার দিকে। ২৩ জানুয়ারি চীনের উহান থেকে একজন চীনা পর্যটক এই ভাইরাস দেশটিতে বয়ে নিয়ে যান। ওই দিনই উহানে পুরো লকডাউন করা হয়েছিল।

রোগটি কোভিড-১৯ নাম পাওয়ার আগেই তা সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা ঠেকানোর জন্য নানামুখী ব্যবস্থা শুরু হয়। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। যার শরীরেই কোনও উপসর্গ দেখা গেছে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় যারা পজিটিভ হয়েছে, তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন করা হয়। সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এমন মন্তব্যও করেছিলেন যে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যান্য সরকারগুলোর জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে।