তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনে সামনে এলো আইএসআই'র গোপন ভূমিকা

তালেবান সরকার ঘোষণার আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট ফয়েজ হামিদ যে ‘নির্লজ্জভাবে’ কাবুল সফর করেছেন তাতে আঞ্চলিক শক্তিগুলো হতভম্ব হয়েছে। তার সফরের এক দিন পরই ঘোষিত নতুন সরকারে পিছিয়ে পড়েছেন ‘মধ্যপন্থী’ তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গণি বারাদার। আর ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছেন মোল্লা হাসান আখুন্দসহ পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের আশীর্বাদপুষ্ট বেশ কয়েকজন নেতা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় তালেবানের নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুল গণি বারাদার। অনেকেই ভেবেছিলেন তিনিই হয়তো আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন। তবে আইএসআই প্রধানের কাবুল সফরের পর পাল্টে যায় হিসাব-নিকাশ।

মৌলভী আমির খান মুত্তাকি

নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। তালেবানের অন্যতম রহস্যাবৃত নেতা তিনি। ১৯৮০’র দশকে সোভিয়েতবিরোধী ‘জিহাদে’ অংশ না নিয়েও তিনি তালেবানের নীতিনির্ধারণী সুরা কাউন্সিলের প্রধান হয়েছেন।

হাসান আখুন্দের বিরুদ্ধে ২০০১ সালে কাবুলের ষষ্ঠ শতাব্দীর বৌদ্ধমূর্তি ভাঙায় নেতৃত্বদানের অভিযোগ রয়েছে। দেওবন্দ ধারায় শিক্ষিত আখুন্দ তালেবানের ধর্মীয় মতাদর্শ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পুরনো সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর মতাদর্শিক ন্যায্যতা দিতেন হাসান আখুন্দ। গত ২০ বছর ধরে তিনি মূলত পাকিস্তানে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। তালেবানের পুরনো সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। মার্কিন হামলায় ওই সরকারের পতনের পর তালেবানের ক্ষমতাধর ‘রাহবারি সুরা’ কাউন্সিলের প্রধান হন। ‘কোয়েটা সুরা’ নামে পরিচিত এই কাউন্সিলের সঙ্গে রয়েছে আইএসআই’র গভীর সখ্য। মোল্লা হাসান আখুন্দ নারী অধিকারে বিশ্বাস রাখেন না।

আবদুল গণি বারাদার সরকার প্রধান না হওয়ার বড় কারণ মূলত হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে তার রাজনৈতিক উত্তেজনা। সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বারাদারের সমঝোতার রাজনীতির কারণে তাকে আট বছর আইএসআই’র কারাগারে কাটাতে হয়েছে। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি অনুরোধে তাকে মুক্তি দিয়ে দোহায় পাঠানো হয়। সেখানেই শান্তি আলোচনায় অংশ নেন তিনি।

মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তালেবান মুখ হিসেবে দেখাতেই তাকে দোহায় পাঠানো হয়। এক পাশে হাসান আখুন্দ আর অন্যপাশে বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে রেখে শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিয়েছেন বারাদার।

সিরাজ্জুদিন হাক্কানি প্রশ্নাতীতভাবে আইএসআই’র আশীর্বাদপুষ্ট। মন্ত্রিসভায় তার নিয়োগ ভারতের জন্য খারাপ খবর। তাকে ধরতে এক কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করে এফবিআই। তবে এই পুরস্কার ঘোষণা খানিক আইওয়াশ বলেও অনেকে মনে করেন। কেননা, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ পুরনো।

এবার দেখা যাক আফগানিস্তানের নতুন মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্তাকি আসলে কে? ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত পিটার টমসন তার বইয়ে জানিয়েছেন, ২০০১ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের ব্যক্তিগত অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র কুন্দুজে বিমান পাঠিয়ে একটি ভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেইমর হার্শ পরে সিআইএ’র পুরনো সূত্রের বরাতে জানিয়েছেন, ওই সময় কুন্দুজ থেকে প্রায় এক হাজার মানুষকে সরানো হয়। তাদের মধ্যে আল কায়েদার সদস্যও ছিল। আর ওই ভিআইপিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুত্তাকি।

এশিয়া টাইমস অবলম্বনে।