তালেবানের সামনে কাবুলের মানুষের মন জয় করার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ

বিশ বছর ধরে লড়াইয়ের পর তালেবানরা বিশ্বের কাছে নিজেদের বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের নিজেদের দেশেই এখন একটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে: রাজধানী থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষের মন জয় করা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশের পর থেকেই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সদস্যরা যুদ্ধের পোশাক পরে সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছে। প্রায়ই তাদের মধ্যে কোনও চেইন অব কমান্ড দেখা যায় না। কাবুলের অনেক বাসিন্দারা এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত না। কঠোর হাতে নিরাপত্তা রক্ষার কৌশলও কোনও কাজে আসছে না।

তালেবানের প্রথম শাসনামলে কাবুলের একজন শিক্ষক আহমদ ছিলেন একজন ছোট শিশু। রাস্তায় যোদ্ধাদের দেখার প্রাথমিক ধাক্কাটা তিনি সামলে নিয়েছেন। শহুরে এই বাসিন্দার মতে, কাবুলের মানুষ তালেবান যোদ্ধাদের ঘৃণা করে। তারা এসেছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। দেখতে বন্য, নোংরা, লম্বা চুল ও নোংরা পোশাকের অশিক্ষিত সব যোদ্ধা। তাদের কোনও ভদ্রতাবোধ নেই।

তালেবান নেতারা বলছেন, কাবুলবাসীদের নিরাপদ বোধ করা উচিত। কিন্তু তারা স্বীকার করছেন পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের এতদ্রুত পতনের ফলে ৫০ লাখ মানুষের শহর কাবুল পরিচালনার জন্য পরিকল্পনার কোনও সময় পাননি। তারা আরও স্বীকার করেছে, তাদের বেশিরভাগ সদস্য যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত বছরের পর বছর ধরে। জনগণকে নিয়ন্ত্রণে পুলিশের প্রশিক্ষণ তাদের নেই।

কাবুলের পুলিশ জেলা ৬ অঞ্চলে তালেবান পেট্রোল কমান্ডার সৈয়দ রহমান হায়দারি বলেন, কোনও এলাকায় সমস্যা হলো আমাদের জানাতে বলা হয়েছে জনগণকে। আমরা সব জায়গায় আমাদের নম্বর দিয়েছি। ঘটনার সময় আমাদের জানান শুধু। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নেব এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করব।

আগের শাসনামলে তালেবানের ধর্মীয় পুলিশ নিয়ম ভাঙার অপরাধে প্রকাশ্যে মানুষদের মারধর করত। এবার বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ দমনে বন্দুকধারীরা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। মানুষকে আটক, রাইফেলের বাট, রড ও পাইপ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালেবান নেতারা এসব ঘটনা তদন্তের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু অনুমতি ছাড়া বিক্ষোভ নিষিদ্ধও করেছে তারা।   

তালেবান কমান্ডার হায়দারি বলেন, মানুষের মনে কোনও ভয় থাকা উচিত না। আমরা তাদের সেবায় রয়েছি দিনে ও রাতে। 

তবে এই বার্তা অনেকেই বিশ্বাস করতে রাজি না।

একটি মিডিয়া গোষ্ঠীটিতে কাজ করা ২২ বছর বয়সের আয়েশা জানান, তালেবান যোদ্ধাদের অনেক নারীদের পেটাতে তিনি দেখেছেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তিনি বাড়ির বাইরে বের হন না।

তার ভাষায়, তালেবান যোদ্ধারা বিপজ্জনক মানুষ। তারা নারীদের পেটায় এবং অপমান করে। তাদের নেতারা কী বলছেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তারা একেবারে বন্য।