বিনিয়োগ স্থগিত করলো টোটালএনার্জিস

আদানির দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে উত্তেজনা

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনা দাবিতে বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে সোমবার ভারতের পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। একই দিনে ফরাসি কোম্পানি টোটালএনার্জিস আদানি গ্রুপের সঙ্গে নতুন বিনিয়োগ স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত সপ্তাহে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এবং আরও সাতজনের বিরুদ্ধে মার্কিন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ আনে যে, তারা ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে প্রায় ২৬৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার সমঝোতা করেছিলেন। এই অর্থ ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়ন এবং ২০ বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার লাভের জন্য দরপত্র জেতার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া অভিযোগে বলা হয়, মার্কিন তদন্তের বিষয়ে জানার পরও জনসাধারণের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছিল। আদানি গ্রুপ এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছে, তারা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

টোটালএনার্জিসের বিনিয়োগ স্থগিত

ফ্রান্সের টোটালএনার্জিস আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। সোমবার কোম্পানিটি জানায়, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তারা নতুন কোনও বিনিয়োগ করবে না।

টোটালএনার্জিসের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দুর্নীতিকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।

এই ঘোষণার পর আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারমূল্য এক পর্যায়ে ১১ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। তবে বাজার বন্ধ হওয়ার আগে ৭.৯ শতাংশ পতনে স্থির হয়।

পার্লামেন্টে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আলোচনার দাবি জানালে কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হন স্পিকার। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় জানান, এই বিষয়ে আলোচনা চেয়ে ১৩টি নোটিশ জমা পড়েছে, তবে নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় তা অনুমোদন করা হয়নি।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, সরকারের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত আদানি ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা, যা ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বিজেপি এই বিষয়ে মন্তব্য না করলেও জানিয়েছে, আদানি গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবিলা করবে এবং আইন তার নিজস্ব পথে চলবে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

মার্কিন অভিযোগের পর আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রকল্প আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছে। গত সপ্তাহে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো আদানিকে কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্তের জন্য একটি বৈশ্বিক আইনজীবী নিয়োগের সুপারিশ করেছে একটি পর্যালোচনা প্যানেল।

গত দুই বছরের মধ্যে এটি আদানি গ্রুপের জন্য দ্বিতীয় বড় সংকট। গত বছর হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তোলে। যা গোষ্ঠীটি অস্বীকার করে।

এবারের অভিযোগের পর আদানি গ্রুপের ১০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারমূল্য দুই দিনে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। সোমবার এদের মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর পুনরায় পতনের মুখে পড়ে।

এই সংকট আদানি গ্রুপ এবং ভারতের সরকারের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিরোধীরা আদানি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সরকার এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।