চীনের পাহাড়ে গাছ লাগাচ্ছে ড্রোন

মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে খাড়া পাহাড়। আর পাহাড়ের গায়ে গাছ লাগাচ্ছে... না কোনও বীর বনবাসী নয়, গাছ লাগানোর কাজে নেমেছে চীনা ড্রোন। বেইজিংয়ের উত্তরের ইয়ানশান পাহাড়টি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার উঁচুতে। এর ঢালে সোমবার আকাশপথে উড়ে গিয়েছিল এক দল ড্রোন—সঙ্গে ছিল ছোট ছোট গাছের চারা। এটিই ছিল বেইজিংয়ে ড্রোন-সহায়তায় পরিচালিত প্রথম বনসৃজন প্রকল্প।

অভিনব প্রকল্পটি চালু হয়েছে বাতালিং ফরেস্ট ফার্মের শিসিয়া এলাকায়, যা কিনা চীনের ‘থ্রি-নর্থ শেল্টারবেল্ট ফরেস্ট প্রোগ্রাম’–এর আওতায় পড়ছে। লক্ষ্য একটাই—বনসৃজনের প্রচলিত পদ্ধতিকে আরও দক্ষ করা। সেইসঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি যতটা কমানো যায় সেটাও নিশ্চিত করা।

ইউমুকৌ গ্রামের দলীয় প্রধান এবং ঘাসভূমি ও বনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়াও ইয়ংকাং বলেন, ‘প্রতিটি ড্রোন একবারে ১০টিরও বেশি চারা বহন করতে পারে। পাহাড়ের খাড়া পাশের দুর্গম জায়গায় খুব নিখুঁতভাবে গাছ লাগানো যায়, আর পুরনো গাছগাছালির ক্ষতিও কম হয়।’

বন কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এই ড্রোন প্রযুক্তিই ক্লিফের গায়ে গাছ লাগানোর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে—আর এই উদ্যোগ শহরের আশপাশে সবুজ এলাকা বাড়ানোর দিকেও বড় পদক্ষেপ।

এই বসন্তে বাতালিং ফরেস্ট ফার্ম হাতে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে পরিবেশ পুনরুদ্ধারের কাজ। ‘থ্রি-নর্থ শেল্টারবেল্ট প্রোগ্রাম’-এর ষষ্ঠ ধাপে এই ফার্ম ২০২৫ সালের মধ্যে ৫৪৩ হেক্টর কৃত্রিম বন ও ক্ষয়প্রাপ্ত বনভূমি পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়েছে।

তবে শুধু গাছ লাগানো নয়, বেইজিং প্রশাসনের পরিকল্পনা আরও রঙিন। ফরেস্ট ফার্মটি তৈরি করছে এক ‘রঙিন গ্রেট ওয়াল ল্যান্ডস্কেপ’, যেখানে বন সংরক্ষণে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ছোঁয়া। স্থানীয় বাসিন্দা ফাং হাও বলেন, ‘আগে এই জায়গাটা মরুভূমির মতো ছিল, এখন সেটা গ্রেট ওয়ালের এক সবুজ ঢাল হয়ে উঠেছে।’

সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, একসময় যেখানে গাছ ছিল মোটে ৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে, সেখানে এখন বাতালিং ফরেস্ট ফার্মে ৭৫ শতাংশ এলাকায় গজিয়ে উঠেছে ঘন বনভূমি।

ইয়াও আরেকটি উদ্যোগ চালু করেছেন, যেখানে পরিবেশ রক্ষা আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন—দুই-ই একসঙ্গে হচ্ছে। গত দুই বছরে গ্রামবাসীরা লাগিয়েছে এক হাজারটি তুন গাছ আর ৩০০টি চেরি গাছ, যা পরিণত হলে এক রকম ‘সবুজ ব্যাংক’ হয়ে লাভের মুখ দেখাবে ২০২৬ সালের মধ্যেই।

উল্লেখ্য, চীনের ‘থ্রি-নর্থ শেল্টারবেল্ট ফরেস্ট প্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। ৭০ বছরের এই বৃহৎ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য, উত্তর চীনের মরুকরণ ঠেকানো। এখন এর সঙ্গী হয়েছে নতুন প্রযুক্তি—ড্রোন বপন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত রোবট প্ল্যান্টার। আর এসব ব্যবহার হচ্ছে অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার মতো মরুপ্রবণ অঞ্চলে, যেখানে এখনো মরুর বিস্তার রুখে দেওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: সিএমজি