স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়া পরিবার আশ্রয় খুঁজছে কানাডায়

এডওয়ার্ড স্নোডেনযুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)-এর গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেনকে হংকংয়ে আশ্রয় দেওয়া তিন পরিবার কানাডার কাছে আশ্রয় চেয়েছে। নিরাপত্তা আশঙ্কায় তারা এই আশ্রয় চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

এনএসএ-এর গোপন নথি ফাঁস করার পর যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে হংকং আসেন স্নোডেন। ২০১৩ সালে হংকংয়ে বসেই তিনি এনএসএ-র গোপন তথ্য ভাণ্ডার তুলে দেন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের হাতে। ২০১৩ সালের জুন মাসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যের ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখতে শুরু করেন। 

হংকংয়ে অবস্থানের সময় এক পর্যায়ে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা শুরু করেন স্নোডেন। কারণ মার্কিন সরকার হংকং কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিচ্ছিল স্নোডেনকে গ্রেফতার করে তাদের হাতে তুলে দিতে। সেই চাপে হংকং কর্তৃপক্ষকে নতি স্বীকার করার সুযোগ না নিয়ে স্নোডেন হংকং ত্যাগ করেন।

ওই সময় হংকংয়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছিল তিনটি পরিবার। ওই তিনটি পরিবার এখন নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় কানাডার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। পরিবারগুলোতে তিনজন শ্রীলঙ্কান, একজন ফিলিপাইনের ও তিনজন শিশু রয়েছেন। হংকংয়ে অনেকদিন ধরে অভিবাসন চাইলেও সেটা প্রত্যাখান হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এজন্যই কানাডার দ্বারস্থ তারা। শুক্রবার তাদের আইনজীবী একথা জানান।  

আইনজীবী মার্ক অ্যান্দ্রে সেগুইন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে স্নোডেন চলচ্চিত্র মুক্তির পর থেকেই পরিবারগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। এখন হংকং সরকারের চাপে রয়েছে তারা। তাদেরকে স্নোডেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আইনজীবী রবার্ট তিবোকেও পড়তে হয়েছে প্রতিকূল অবস্থায়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ তাদের খুঁজছে। কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, এই বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আবেদনপত্র পাওয়ার বিষয়টি উড়িয়েও দেননি তিনি।

তবে শ্রীলঙ্কার কেউ হংকংয়ের কাজ করছে এই বিষয়ে নিশ্চিত না হংকং কর্তৃপক্ষ। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি খতিয়ে দেখবে তারা। কারণ হংকংয়ে কোনও বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধির আইনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশ অবৈধ। এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, ‘হংকংয়ের সবাই হংকং আইনের দ্বারা সুরক্ষিত। তারা যে পরিচয়েরই হোক না কেন।’

উল্লেখ্য, এডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ-র সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ২০১৩ সালে গোপন নজরদারির বিভিন্ন তথ্য ফাঁস করে সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন স্নোডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই ফাঁসের ঘটনায় সামনে আসে নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর মার্কিন গোয়েন্দা নজরদারির ভয়াবহতা। তথ্যফাঁসের পর থেকেই স্নোডেন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজ দেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে,তাতে তার অন্তত ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ানটেড ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে তার নাম। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। রাশিয়া স্নোডেনকে তিন বছর থাকার অনুমতি দিয়েছে। আগামী বছর স্নোডেন রাশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সূত্র: রয়টার্স

/এমএইচ/এএ/