ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে কিশোরী গ্রেটা

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে আপনাদেরই অনেকে জড়িত

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উদ্দেশে সুইডেনের কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ (১৬) বলেছে, বৈশ্বিক উষ্ণয়নের পেছনে তাদের মতো ক্ষমতাশালীদের অনেকেই জড়িত। এসব ব্যক্তিদের উচিত অর্থনৈতিক স্বার্থকে একপাশে রেখে একটি বাসযোগ্য বিশ্ব নিশ্চিতে কাজ করা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো শিশু-কিশোরদের সংখ্যা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দিন দিন বাড়ছে। সমাবেশ আয়োজন থেকে শুরু ধর্মঘট ডাকার মতো কাজ করেছে এসব বিদ্যালয় পড়ুয়া শিশু-কিশোররা।গ্রেটা টার্নবার্গ
তিন বছর আগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছিল। সেখানে নির্ধারিত হয়েছিল, দেশগুলো সম্ভব হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করবে। গত তিন বছরে এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জোরদার করা তো দূরে থাক বরং পদক্ষেপগুলো নিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ আরও বেড়েছে। অথচ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির প্রভাবেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একদিকে যেমন দেখা যাচ্ছে দাবানল, অন্যদিকে তেমন দেখা দিচ্ছে হ্যারিকেন।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের’ সম্মেলনে জড়ো হওয়া বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ী ও নীতিপ্রণেতাদের সামনে গ্রেটা বলেছে, ‘কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খুব ভালো করেই জানেন কী কী অমূল্য সম্পদ আমাদের খোয়াতে হচ্ছে তাদের বিশাল পরিমাণ অর্থ আয়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য। আমি মনে করি, এমন বেশ কিছু ব্যক্তি এখানে উপস্থিত আছেন।’ গ্রেটা আরও বলেছে, ‘সুইডেন কোনও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত নয়। মাথাপিছু দূষণের মাত্রার দিক দিয়ে সুইডেন বিশ্বর প্রথম দশটি দেশের একটি।’ পরে বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় গ্রেটা মন্তব্য করেছে, ‘এই ব্যক্তিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। পরিবর্তন সাধনের ক্ষমতা তাদের আছে। তাই আমি মনে করি তাদের দায়িত্বও অনেক বেশি। নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে একপাশে সরিয়ে রেখে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতে ভূমিকা রাখা উচিত তাদের।’
_105344553_climateberlingroupafp25janগ্রেটা প্রতি শুক্রবার সুইডেনের সংসদ ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে। কেউ কেউ ‘স্কুল পালানোর’ ও ‘লোক দেখানো কাজ করার’ অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেছে গ্রেটার। এর জবাবে গ্রেটার এক জার্মান সমর্থক জ্যাকব ব্লাসেল মন্তব্য করেছে, ‘পরিবেশ আন্দোলন আমাদের কাছে শিক্ষার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যদি কোনও ভবিষ্যতই না থাকে, তাহলে পড়াশোনা করে কী হবে?’
গ্রেটার মতো ইউরোপের আরও অনেক শিশু-কিশোর পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে সরব হয়ে উঠেছে। জার্মানির বার্লিনে হাজার হাজার স্কুল শিক্ষার্থী একযোগে আবেদন জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।  সুইজারল্যান্ডেও শিশুদের ছোট ছোট কর্মসূচি পালিত হয়েছে।  সুইজারল্যান্ডে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তো রীতিমত ধর্মঘট পালন করেছে।
বেলজিয়ামে গত বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) প্রায় ৩৫ হাজার কিশোর-কিশোরী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে যথাযথ পদক্ষেপের দাবিতে মিছিল করেছে। সেখানে ‘ডাইনোসরেরাও ভেবেছিল, তাদের হাতে সময় আছে,’ ‘সমস্যা নয়, সমাধানের অংশ হোন’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়েছে। জার্মানিতেও চলছে জোর  প্রচারণা। সেখানকার কিশোর-কিশোরীদের একটি জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে, ‘দ্বিতীয় কোনও পৃথিবী নেই।’ নতুন প্রজন্ম বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস অ্যাকর্ড মেনে চলার।