গণভোটে নেকাব নিষিদ্ধের রায় সুইস ভোটারদের

সুইজারল্যান্ডের গণভোটে সামান্য ব্যবধানে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধের বিতর্কিত প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবে পোশাকের সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা না হলেও মুসলিম নারীদের নেকাবকে লক্ষ্য করেই প্রচারণা চালানো হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও বিষয়ে এক লাখ মানুষ স্বাক্ষর দিলে সেই প্রস্তাবের ওপর জাতীয়ভাবে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ ইস্যুতে গণভোটে ৫১ দশমিক দুই শতাংশ মানুষ প্রস্তাবটির পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে দেশটির ২৬টি ক্যান্টনের (প্রশাসনিক অঞ্চল) ছয়টিতে বেশিরভাগ মানুষ এই প্রস্তাব সমর্থন করেননি। এই ছয় ক্যান্টনের মধ্যে রয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় তিন শহর জুরিখ, জেনেভা ও বাসেল। এছাড়া রাজধানী বার্নের অধিকাংশ মানুষও ছিলেন বিপক্ষে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখতে পারবেন না। রেস্টুরেন্ট, স্টেডিয়াম, গণপরিবহন এমনকি রাস্তায় হাঁটার ক্ষেত্রেও মুখমণ্ডল আবৃত করে এমন পোশাক পরা যাবে না। তবে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ করোনা থেকে সুরক্ষায় মাস্ক পরতে কোনও সমস্যা নেই। প্রার্থনাস্থলে এই নিয়মের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।

এরইমধ্যে দেশটির দুইটি অঞ্চলে নতুন নিয়ম কার্যকর রয়েছে। সেটি সারা দেশের প্রযোজ্য হবে কিনা সেই বিষয়ে রবিবার ভোটাভুটি হয়েছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।

যারা পক্ষে

সুইজারল্যান্ডে এই প্রস্তাবের কোথাও বোরকা, নেকাবের কথা আলাদা করে বলা হয়নি। তবে এর পক্ষের রাজনৈতিক প্রচারে মুসলিম নারীদের পোশাককেই সামনে আনা হয়েছে। সুইস পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দ্য সুইস পিপলস পার্টি প্রস্তাবের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। তাদের বিতরণ করা প্রচারপত্রে বোরকা পরা এক নারীর চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘ইসলামি উগ্রবাদ থামাও।’

বাস্তবতা হচ্ছে সুইজারল্যান্ডে সচরাচর বোরকা, নেকাব পরিহিত নারীদের তেমন একটা দেখা যায় না। তারপরও এমন প্রস্তাব কেন উঠেছে সেটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। এই বিষয়ে সুইস পিপলস পার্টির এমপি জ্যঁ-লুক অ্যাডোর বলেন, বোরকা পরা খুব বেশি নারী সুইজারল্যান্ডে নেই সেটা সৌভাগ্যের। তবে তার যুক্তি, ‘কোনও বিদ্যমান সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত।’

যারা বিপক্ষে

এ প্রস্তাবের বিরোধীরা বলছেন, এর মাধ্যমে অকারণ ইসলামভীতি ছড়ানো হচ্ছে। তাদের একটি প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ‘অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ও ইসলামভীতি ছড়ানো বোরকা বিরোধী আইনকে না বলুন।’ যেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ পরিচয় নিশ্চিত হতে চাইবে সেসব ক্ষেত্রে কেউ মুখ ঢাকা পোশাক পরলেও চেহারা দেখানোর বাধ্যবাধকতার পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। নিষিদ্ধের প্রস্তাবটি ভোটে বাতিল হলে তাদের এই বিকল্প প্রস্তাব কার্যকর হতো।

মুসলিম নারীবাদীদের প্রতিবাদ

প্রস্তাবটিতে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলোকে বর্ণবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছে মুসলিম নারীদের সংগঠন পার্পল হেডসকার্ভস। বার্তা সংস্থা এএফপিকে সংগঠনটির মুখপাত্র ইনেস এল-শিখ বলেন, প্রস্তাবিত আইনে যা সমস্যা নয় সেটিকে একটি সমস্যা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ পুরো সুইজারল্যান্ডে মাত্র ৩০ জন নারী বোরকা পরেন। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮৬ লাখ জনসংখ্যার সুইজারল্যান্ডে মাত্র ৫ দশমিক ৫ ভাগ মুসলিম। সূত্র: ডিডব্লিউ।