যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে শঙ্কা, সংশয় অনেকখানি কেটেছে। ব্রিটিশ সরকার দুই মাস আগেও এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে সংশয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির ডাক্তার আনোয়ার আলী, ডা. ফারজানা হোসেইন, মাহফুজ আহমেদের মতো ডাক্তাররা জিপি সার্জারি থেকে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করছেন। দেশটিতে বাংলা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিক সংগঠন ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব ভ্যাকসিন গ্রহণে কমিউনিটির মানুষদের আগ্রহী করতে জানুয়ারি মাস থেকে সচেতনতামুলক প্রচারণা শুরু করে।
গত দেড় মাসে ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির তরুণদের মধ্যেও করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। কী ওয়ার্কার ও স্যোশাল ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করা তরুণ বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই এরমধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সে সবের ছবিও তারা পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বেগ-সংশয় কমার পেছনে এসবেরও ভূমিকা রয়েছে।
যদিও ব্রিটেনে খোদ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা ও সংশয় রয়েছে। দোকান-পাট করোনা লকডাউনে বন্ধ থাকলেও ভ্যাকসিনবিরোধী বইগুলোর ব্যাপক বিক্রি বেড়েছে অ্যামাজন, ওয়াটার স্টোনসহ বিভিন্ন ই-কসার্ন ওয়েবসাইটে। খোদ দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগও এ বিভ্রান্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
লন্ডনে বসবাসরত লেখক, কবি আতাউর রহমান মিলাদ বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণায় বিভিন্ন কমিউনিটির কিছু সংখ্যক মানুষ তা গ্রহণে অনিচ্ছুক। এখন বড় কাজ হচ্ছে তাদের যুক্তি দিয়ে বুঝানো যে তাদের জানা বা দেখা ভুল ছিল। সংবাদমাধ্যম, সমাজকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে পারেন।
যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারাও অন্যকে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ভ্যাকসিনের বিভিন্ন উপকারিতা এবং এটি যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন তা বুঝাতে সহযোগিতা করতে হবে।
বিলেতে বসবাসরত কবি আবু মকসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শেফিল্ড শহরে থাকি, এই শহরে প্রায় দশ হাজার বাঙালির বাস। অন্যান্য শহরের মতো শেফিল্ডেও করোনা তাণ্ডব দেখিয়েছে। মারা গেছেন বেশ কয়েকজন বাঙালি।
তিনি আরও বলেন, মানুষের ভয় এখনও কাটেনি। আশার কথা হচ্ছে ভ্যাকসিন কাজ করছে। এটি নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু গুজব, কিছু ভুল তথ্য ছাড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
বিশ্বের মধ্যে ব্রিটেনেই সবার আগে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলার অহিদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি শংকিত। কারণ যে হারে আমাদের কমিউনিটির মানুষ ভ্যাকসিন নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ইমাম ও ইসলামি চিন্তাবিদরা অনুরোধ করে যাচ্ছেন। তবু কেন জানি কাজ হচ্ছে না। মানুষজন যড়যন্ত্র তত্ত্বই বেশি বিশ্বাস করছেন। আমি কমিউনিটির সবাইকে অনুরোধ করছি, দয়া করে ভ্যাকসিন নিন। আল্লাহর হুকুমে আপনি, আপনার পরিবার ও প্রতিবেশী সবাই রক্ষা পাবেন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই কোনও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না এবং তা নিতে অবহেলা করবেন না।
ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ না নিলে আগামীতে বিমান ভ্রমণ, কাজ সব ক্ষেত্রেই বিপাকে পড়তে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাজ্য যুবলীগের জনসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ হোসেন চৌধুরী নাজিম বলেন, সবার ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। ব্রিটেনে এটি দ্রুত কাজ করছে এবং মৃত্যুহারও অনেক কমে এসেছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের যদি দুই ডোজ করোনার টিকা নেওয়া থাকে তাহলে ব্রিটেনে আসার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। টিকা গ্রহণের সনদ দেখিয়ে সরাসরি বাড়ি চলে যেতে পারবেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডিরেক্টর সিডিসি অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় সম্প্রতি এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে যারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এবং নেওয়ার ১৪ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন এবং কোভিড-১৯ পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট প্রদর্শনের প্রয়োজন হবে না। এটি যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর সব দেশ থেকে আগত যাত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।