আজভস্টলের কয়েকশ’ ইউক্রেনীয় যোদ্ধার ভাগ্যে কী আছে?

রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের মারিউপোলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩০ জন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আত্মসমর্পণ করেছে ৭৭১ জন। রাশিয়ার এই দাবি ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণ করার সেনার চেয়ে বেশি। তবে এখন পর্যন্ত এই সেনাদের পরিণতি কী হবে তা জানা যায়নি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।

ইউক্রেন বলছে, তারা বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে রাশিয়ার কাছ থেকে এই যোদ্ধাদের ফিরিয়ে আনতে চায়। তবে মারিউপোলের স্টিল কারখানায় কতজন যোদ্ধা রয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এমনকি আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়ার পর তারা জানিয়েছে, মাত্র ২৫০ জন যোদ্ধা অস্ত্র সংবরণ করেছে।

অঞ্চলটিতে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ডেনিস পুশিলিন জানান, প্রায় অর্ধেক যোদ্ধা এখনও কারখানার ভেতরে রয়েছে। কারখানার ভূগর্ভস্থ বাংকার ও সুড়ঙ্গে এসব যোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে আছে কয়েক সপ্তাহ ধরে।

তিনি বলেন, অর্ধেকের বেশি চলে গেছে, অর্ধেকের বেশি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের আত্মসমর্পণ করতে দিন, তাদেরকে বাঁচতে দিন, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মুখোমুখি হতে দিন।

পুশিনিন জানান, আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। যারা সুস্থ আছেন তাদেরকে বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছে এবং ভালো আচরণ করা হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, যোদ্ধাদের পরিণতির বিষয়ে প্রকাশ্যে তারা মন্তব্য করতে পারছেন না। কারণ তাদেরকে উদ্ধারের জন্য পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে।  

সামরিক মুখপাত্র ওলেক্সান্ডার মটুজায়নিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের সেনাদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে রাষ্ট্র। এই বিষয়ে যেকোনও তথ্য প্রকাশ হলে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

ইউক্রেনের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ে সম্মত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। আজভস্টল কারখানায় থাকা ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের বেশিরভাগ উগ্র ডানপন্থী আজভ রেজিমেন্টের সদস্য। মস্কো এদেরকে নাৎসি বলে দাবি করে বিচার করতে চায়। ইউক্রেন তাদেরকে জাতীয় বীর আখ্যা দিয়েছে।

মারিউপোলের লড়াইয়ের অবসানের ফলে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার দখল করা বৃহত্তম শহর এটিই। এর ফলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে একটি বিরল বিজয় দাবি করতে পারবেন। এর ফলে আজভ সাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবে রুশ বাহিনী।

প্রায় তিন মাসের রুশ অবরোধ ও বোমা বর্ষণের ফলে মারিউপোলের কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। রেডক্রস ও জাতিসংঘ বলছে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৯০ দশকের চেচনিয়া ও বলকান যুদ্ধের পর এটিই ইউরোপের রক্তাক্ত যুদ্ধ।

প্রতিবেশী ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্তকরণ করতে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এ বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর কথা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেন ও পশ্চিমারা বলছে, উসকানি ছাড়াই আগ্রাসী এই যুদ্ধে রাশিয়া কয়েক হাজার বেসামরিককে হত্যা করেছে।