রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে ভারতকে পাশে চাইছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনের মিত্ররা রাশিয়াবিরোধী জোটকে সম্প্রসারণ করতে চাইছে। এই লক্ষ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত যেন নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার জার্মানিতে জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এই সম্মেলনের আলোচনার মূল মনোযোগ ইউক্রেন। এখন পর্যন্ত রুশ তেল কিনতে ভারতকে নিবৃত্ত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ শুরুর আগের তুলনায় ভারতের রুশ তেল কেনার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা আরও চারটি দেশ– আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

মোদি চলমান যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। তিনি আহ্বান জানিয়ে আসছেন, কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধানের জন্য। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ক্রেমলিনের তেলের আয় কমিয়ে আনতে মার্কিন প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসন হয়ত চীনকে মোকাবিলায় ভারতে অত্যাবশ্যক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের পরও ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে না।

জি-৭ সম্মেলনে মোদি জলবায়ু, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও লিঙ্গ সমতার অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-৭ দেশগুলোকে নিয়ে একটি অবকাঠামো তহবিলের ঘোষণা দিয়েছেন। যা ভারত ও অন্যত্র চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের পাল্টা পদক্ষেপ হবে। এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৬০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করা হবে।

জার্মানিতে জি-৭ সম্মেলন এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ইউক্রেনের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ শুধু দেশটির জন্য নয়, ইউরোপের জন্য ভূরাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। একই সঙ্গে তা বিশ্বে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলেছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রুশ জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে। কিন্তু একই সময়ে ভারত ও চীন নাটকীয় মাত্রায় রুশ তেল কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমারা রুশ তেল না কেনার কারণে তারা সস্তায় (প্রতি ব্যারেল ৩০ ডলার) মস্কোর কাছ থেকে কেনার সুযোগ হাতছাড়া করছে না।

২০১৯ সালে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর মোদি অঙ্গীকার করেছিলেন ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ করবেন। তার সরকার বলছে, ভারতের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে নির্ভরযোগ্য ও সস্তায় জ্বালানি সরবরাহের ওপর। ইরানের তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের সামনে খুব বেশি বিকল্প নেই।

ভারতের রুশ তেল কেনার সমালোচনা করছে পশ্চিমারা। কিন্তু একই সময়ে ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা রুশ তেল আমদানি করাকে পশ্চিমাদের ভণ্ডামি হিসেবে অভিযোগ করেছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ভোগেল গ্রুপ কনসালটেন্সির সামির এন. কাপাডিয়া মনে করেন, রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় বৈধভাবে তেল কেনার কারণে পশ্চিমারা ভারতে শাস্তি দেওয়ার কথা এখনই ভাবছে না। তবে এমন আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টি একেবারে অগ্রাহ্যও করা হবে না।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস