ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধে যোগ দেবে বেলারুশ?

দুই বছর আগে সাশা (ছদ্মনাম) নির্বাচনি সমাবেশ আয়োজন করছিলেন। তার চেষ্টা সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে বেলারুশ একমাত্র যে প্রেসিডেন্ট পেয়েছে তাকে উৎখাত করা। মিনস্কের এই বাসিন্দা মাঠে নেমেছেন ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে যাতে বেলারুশকে না জড়াতে পারেন প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইককে সাশা বলেন, বেলারুশিয়ানরা শুধু শান্তি জীবন-যাপন, কিছু অর্থ উপার্জন এবং নিজের ও পরিবারের জীবন উন্নত করতে চায়– এটিই সবার চাওয়া। তারা যুদ্ধে যেতে চায় না, তাদের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। তাই তারা এর অংশ হতে চায় না।

লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক ওঠা-নামা করলেও ২০২০ সালের ৯ আগস্টে অনুষ্ঠিত বেলারুশের নির্বাচনের পর তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মহল ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নিন্দা জানিয়েছে। এর পর নৃশংস দমন অভিযান চালায় সরকার। এখনও কারাগারে রয়েছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা।

পুতিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ইউক্রেনে চলমান রুশ যুদ্ধে বেলারুশের ভূমিকায় আলোকপাত করে। ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির ৬৭৪ মাইল সীমান্ত রয়েছে। যুদ্ধে পুরোপুরি অংশগ্রহণ না করলেও কিয়েভে আক্রমণ পরিচালনার জন্য রুশ সেনাবাহিনীকে নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন।  

লুকাশেঙ্কোর বেলারুশের ক্ষমতায় থাকা পুতিনের জন্য কাজের বলে প্রতীয়মান হয়েছে। যদিও আশঙ্কা রয়েছে, রুশ নেতা হয়ত তার এই ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে ইউক্রেন আক্রমণে আরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পারেন। যা ইউক্রেনে রুশ আক্রমণে বেলারুশের সেনাদের যুক্ত করতে পারে।

৩০ বছর বয়সী সাশা বলেন, বেলারুশে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ যে লুকাশেঙ্কোর হাতে রয়েছে তা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। বেলারুশে এখন শুধু লুকাশেঙ্কো নন, কারণ বেলারুশে অনেক রুশ কর্মকর্তা রয়েছে যারা নির্দেশ দিচ্ছেন। বেলারুশে এখন দুটি দখলদারিত্ব চলছে। লুকাশেঙ্কো যিনি মানুষকে পেটাচ্ছেন এবং নিপীড়ন। এছাড়া রয়েছে রুশরা, যারা লুকাশেঙ্কোর চেয়েও খারাপ।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বেলারুশের স্কুল শিশুরা রুশপন্থী প্রোপাগান্ডার মুখে পড়েছে। সব সময়েই আদর্শ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হতো। কিন্তু গত ছয় মাসে পাঠ্যক্রমে ইতিহাসের নতুন সংস্করণ যুক্ত করা হয়েছে।

সাশা বলছেন, সেনা সদস্য, এমনকি জেনারেলরা এসে ব্যাখ্যা করছেন যুদ্ধ কত সুন্দর ও ভালো এবং প্রত্যেক বেলারুশিয়ানদের দায়িত্ব হলো যুদ্ধে যাওয়া। যত্তসব বাজে কথা।

জানা গেছে, থিয়েটার প্রযোজনায় শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে রুশ স্বাধীনতাদানকারী ও ইউক্রেনীয়দের নাৎসি দখলে বসবাস করা তুলে ধরার জন্য। যা ইউক্রেনে আক্রমণে ক্রেমলিনের অজুহাতের ন্যায্যতা দান।

দেশাত্ববোধক ও যুদ্ধের গান তো প্রতিদিনই থাকছে। আরও থাকছে ইউক্রেনকে শত্রু হিসেবে তুলে ধরার শিক্ষা। এসব মতদীক্ষাদানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ‘দ্য ইউনিয়ন অব মাদার্স’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন সাশা।

ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ফলে আশঙ্কা জাগছে যে, আজ বা কাল পুতিনের আক্রমণে বেলারুশ আরও প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে পারে। মে ও জুন মাসে রাশিয়া ইস্কান্দার, পান্তসির ও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

লুকাশেঙ্কো একটি নতুন দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড তৈরি এবং দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার সেনারা পশ্চিম ইউক্রেনে লড়াই করতে পারে যাতে করে পশ্চিমাদের দ্বারা তা কর্তন না হয়।

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, ব্রেস্ট ও গোমেল সীমান্ত অঞ্চলে বেলারুশের সেনারা নিজেদের প্রস্তুতি যাচাই করছে।

তবে বেলারুশের স্পেশাল ফোর্সে সিনিয়র কর্মকর্তা এক উন্মুক্ত চিঠিতে লুকাশেঙ্কোকে রুশদের সঙ্গে বেলারুশিয়ানদের যুদ্ধে পাঠানোর বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, এটি হবে একেবারে আত্মঘাতী। এছাড়া যুদ্ধে প্রস্তুত নয় এমন সেনাদের মোতায়েন করলে লুকাশেঙ্কোবিরোধী ক্ষোভ আরও বাড়তে পারে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কোনরাড মুজিকা অনুমান করেছিলেন, যুদ্ধের শুরুতেই লুকাশেঙ্কো ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী ডনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিতে পারেন। এরপর তিনি যুদ্ধে জড়াতে ও ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে পারেন।

তিনি বলেন, কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি। এতে আমি খুব অবাক হয়েছি। যুদ্ধ যত গড়াচ্ছে আমার অনেক পর্যালোচনা বদলে গেছে। এখন পর্যন্ত যখন ঘটেনি তখন তিনি হয়ত ইউক্রেনে সেনা পাঠাবেন না।

সূত্র: নিউজউইক