কীভাবে ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারে রাশিয়া

ইউক্রেন ভূখণ্ডে রাশিয়ার আগ্রাসন শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক আগ্রাসনে রূপ নেবে কিনা সে সম্পর্কে ভ্লাদিমির পুতিনের বিভিন্ন সময়ের মন্তব্য পশ্চিমাদের মধ্যে জল্পনা তৈরি করে রেখেছে। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি এখন পর্যন্ত কম বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

গত সপ্তাহে পুতিন জোর দিয়ে বলেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়নের কোনও প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পারমাণবিক নীতি কর্মসূচির সহ-পরিচালক জেমস অ্যাক্টন বলেন, রাশিয়া ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্রের আশ্রয় নিতে পারে, এটা একদমই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইককে তিনি বলেন, মস্কোর পারমাণবিক ব্যবহারে আশঙ্কা নেই এখন পর্যন্ত, তবে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কো ব্যাকফুটে চলে গেলে আমি বিশ্বাস করি একটা হামলার শঙ্কা থেকে যায়। যদিও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে এমন পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

রাশিয়ার কাছে কতটি পারমাণকি অস্ত্র রয়েছে তা স্পষ্ট করেনি ক্রেমলিন। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন ধারণা করছে যে, রাশিয়ার কাছে  প্রায় ২০০০ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এসব যুদ্ধক্ষেত্রে কখনও ব্যবহার করা হয়নি।

রাশিয়ার কাছে কতটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে?

পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা যা জানা গেছে তা প্রাক্কলন। তবে ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট-এর মতে, রাশিয়ার কাছে ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। এটিই পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। এরমধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫০০, যেগুলো কাজে লাগছে না এবং পরিত্যক্ত হওয়ার পথে।

লন্ডনের চ্যাথাম হাউহ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা পরিচালক প্যাট্রিসিয়া লুইস বলেন, যুদ্ধের মধ্যেই পারমাণবিক সক্ষমতার বার্তা পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা জানি তারা এটি করতে পারে। এজন্য একটি ইউক্রেনে দখলকৃত একটি শহর খালিও করছে রাশিয়া।

রাশিয়া ইউক্রেনের কোনও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাবে কিনা এ বিষয়ে জেনেভাভিত্তিক বিশ্লেষক পাভেল পডভিগ বলেন, ইউক্রেনে বাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাই কোনও সামরিক লক্ষ্য থাকবে বলে মনে হয় না। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবে অর্থহীন।

শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশগুলো নিয়ে গঠিত জি-৭ গত শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, মস্কো যদি কোনও রাসায়নিক, জৈবিক অথবা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তবে গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

তবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে রাশিয়ার নিজ সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রেও একটা প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষক পডভিগ মনে করেন, এটি কল্পনা করা কঠিন যে প্রেসিডেন্ট পুতিন তার জেনারেলদের একাংশকে ডেকে পাঠাবেন এবং তাদের বলবেন দেখুন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং একটা (পারমাণবিক হামলা) পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দশ বা কয়েক লাখ মানুষকে হত্যা করছি।

তবে পুতিনের আদেশ তারা সরাসরি অমান্য করবেন বিষয়টি এমন নয়। আপনি ধরে রাখতে পারেন যে একটি কঠিন আদেশ এবং তারা সেই পদক্ষেপের সম্পর্কে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারেন।

সূত্র: নিউজউইক