গত মাসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একটি হোটেলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রায়ান ইভান্স নিহত এবং আরও দুই সাংবাদিক আহত হন। দক্ষিণ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের রোস্তভে অবস্থানরত রুশ বাহিনী ২৪ আগস্ট ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুড়েছিল বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। চারটি ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
২৪ আগস্টের হামলার নিয়ে আগের অপ্রকাশিত একটি প্রতিবেদন রয়টার্সকে দিয়েছে ইউক্রেনের গোয়েন্দা পরিষেবা। তারা বলছে, ইউক্রেনীয় সীমান্তের কাছে আজভ সাগরের উপকূলে রাশিয়ার তাগানরোগ শহরের কাছাকাছি একটি অবস্থান থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা পরিষেবাগুলো বলেছে, ৪৯তম সেনাবাহিনীর ফার্স্ট গার্ডস রকেট ব্রিগেড এবং ৩৫তম সেনাবাহিনীর ১০৭তম গার্ড রকেট ব্রিগেড নামের দুটি রুশ ইউনিট তখন ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের স্থানের কাছাকাছি কাজ করছিল।
রয়টার্সের প্রশ্নের পৃথক লিখিত জবাবে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, তাগানরোগের কাছে একটি তৃতীয় ইউনিট, ৮ম সেনাবাহিনীর ৪৭ম রকেট ব্রিগেডও ছিল, যেটি হামলাটি পরিচালনা করে থাকতে পারে।
জেনারেল স্টাফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই এলাকা থেকে রাত প্রায় ১০ টা ২৮ মিনিটে একটি রুশ ইস্কান্দার ৯এম৭২৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। নিক্ষেপের সাত মিনিট পর সেটি ক্রামতোর্স্কের স্যাফায়ার হোটেলে আঘাত করে। হোটেলটিতে তখন রয়টার্স টিম অবস্থান করছিল।
জেনারেল স্টাফ বলেছেন, একটি ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুর ৩০ মিটারের মধ্যে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে স্যাফায়ারকে লক্ষ্য হিসেবে মনোনীত করেছে বা হোটেলটিতে কেন আঘাত করা হয়েছিল সে সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারে এমন কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই।
রয়টার্সের প্রশ্নের লিখিত জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, তাদের ইউনিটগুলো সশস্ত্র বাহিনীর হামলার জবাব দেওয়ার জন্য সেখানে ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাহিনী, আমরা আবারও বলছি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু সামরিক অবকাঠামোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংযুক্ত বস্তুগুলোতেই হামলা চালায়।’
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রয়টার্সের লিখিত প্রশ্নের কোনও জবাব দেয়নি।
ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা পরিষেবা কিংবা জেনারেল স্টাফের বিবৃতির কোথাও বলা হয়নি তারা কীভাবে তাগানরোগের উৎক্ষেপণ স্থানটিকে চিহ্নিত করেছিল। ওই হামলার জন্য কোন ব্রিগেড দায়ী সেটিও উল্লেখ করেনি তারা।
রয়টার্স ইউনিটে কর্মরত একজন অফিসারের মাধ্যমে ১০৭তম রকেট ব্রিগেডের কমান্ডারদের কাছে মন্তব্যের জন্য একটি লিখিত অনুরোধ পাঠিয়েছিল। তবে কোনও প্রতিক্রিয়া পায়নি তারা। বার্তা সংস্থাটি ১ম রকেট ব্রিগেডের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত একটি নম্বরে কল করেছিল। একজন দায়িত্বরত অফিসার কলটি রিসিভ করলে রিপোর্টার তাকে নিজের পরিচয় দেন। পরে কলটি কেটে দেন তিনি।
৪৭তম ব্রিগেড সদর দফতরে টেলিফোনের উত্তর দেওয়া দায়িত্বরত অফিসারকে রয়টার্স জিজ্ঞাসা করেছিল, ইউনিটটি স্যাফায়ার হোটেলে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল কি-না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি অসম্ভব।’
ওই অফিসার তার নাম প্রকাশ করেননি। এ বিষয়ে আরও প্রশ্ন থাকলে তার কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি।
বিগ্রেডের কমান্ডার ভিটালি ববির প্রাথমিকভাবে টেলিগ্রাম মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে রয়টার্সের এক প্রতিবেদকের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করেন। তবে তাকে যখন তদন্তের প্রকৃতি সম্পর্কে জানানো হয় তখন তিনি বলেছিলেন, এটি একটি ভুল নম্বর।