কোটিপতি বাবা ‘সাধারণ মানুষের মতো’ কাজ করতে পাঠালেন ছেলেকে

ভারতের গুজরাটের হীরা ব্যবসায়ী সাভজি ঢোলাকিয়া। ৭১টি দেশে তার ‘হরে কৃষ্ণ ডায়মন্ড কোম্পানি’র ব্যবসা রয়েছে। সুরাটভিত্তিক এ কোম্পানির সম্পত্তির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি। সাভজি ঢোলাকিয়ার একমাত্র ছেলে দ্রাভিয়া ঢোলাকিয়া। ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে ব্যাপক আরাম-আয়েশেই জীবন কাটানোর কথা তার। কিন্তু একমাত্র ছেলে বিলাসিতার জীবনে গা ভাসিয়ে দেবে এমনটা চাইতেন না বাবা। চাইতেন তার সন্তান নিজের পায়ে দাঁড়াবে। জীবন সংগ্রাম বুঝতে শিখবে।

২১ বছরের দ্রাভিয়া ঢোলাকিয়া যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ-র ছাত্র ছিলেন। সম্প্রতি ছুটি কাটাতে ভারতে আসেন তিনি। একদিন হঠাৎ তাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন সাভজি। বলেন, কেরালার কোচি গিয়ে সম্পূর্ণ নিজের উপার্জনের টাকায় এক মাস চলতে।

 

সাভজি বলেন, ‘আমি তাকে তিনটি শর্ত দিলাম- ছেলেকে বললাম টাকা উপার্জনের জন্য তার কাজ করতে হবে। কোনও জায়গায় এক সপ্তাহের বেশি কাজ করা যাবে না। আরও বললাম সে এক মাস বাবার পরিচয় ব্যবহার করতে পারবে না, মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না কিংবা বাড়ি থেকে নেওয়া ৭ হাজার রুপি খরচ করতে পারবে না। আমি চেয়েছি সে জীবনের মূল্য বুঝুক। চাকরি আর টাকা উপার্জনের জন্য দরিদ্ররা কতোটা কষ্ট করে তা বুঝতে শিখুক। তাকে বললাম, অভিজ্ঞতা অর্জন ছাড়া কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে জীবনের এ দক্ষতাগুলো শেখাতে পারবে না’।

বাবার দেওয়া চ্যালেঞ্জ মেনে নেন দ্রাভিয়া। সিদ্ধান্ত হয়, তিনি এমন কোনও জায়গায় যাবেন যা তার কাছে অপরিচিত এবং সেখানকার ভাষাও নতুন। আর সে জায়গায় গিয়ে চাকরি খুঁজবেন তিনি।

সাভজি বলেন, ‘ও কোচি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ সে মালায়ালাম ভাষা বুঝতে পারত না। আর ওই এলাকায় সাধারণত কেউ হিন্দি ভাষায় কথা বলে না’।

গত ২১ জুন কোচি পৌঁছান দ্রাভিয়া। সঙ্গে ছিল ৩ জোড়া জামা-প্যান্ট আর বাবার দেওয়া ৭ হাজার রুপি। তাও বাবা বলে দিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ওই টাকা খরচ না করতে।

কোচি যাওয়ার পর যে ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তা বর্ণনা করেন দ্রাভিয়া। তিনি বলেন, ‘পাঁচদিন পর্যন্ত আমার কোনও চাকরি ছিল না। থাকার জন্য যথাযথ কোনও জায়গায়ও ছিল না। ওই এলাকায় কেউ আমাকে চিনত না। চাকরির জন্য ৬০ টি জায়গায় চেষ্টা করে বার বার প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝে গেলাম প্রত্যাখান কাকে বলে আর চাকরির মূল্য কত!’

দ্রাভিয়া ঢোলাকিয়া জানান, চাকরি পাওয়ার জন্য নিয়োগকারীদের মিথ্যে বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন তিনি দ্বাদশ শ্রেণি পাস এবং গুজরাটের একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। একটি বেকারিতে জীবনের প্রথম চাকরি হলো তার। এরপর একে একে তিনি একটি কল সেন্টার, একটি জুতার দোকান এবং একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন দ্রাভিয়া। এক মাসে ৪ হাজার টাকার চেয়ে সামান্য বেশি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হন তিনি।

দ্রাভিয়া বলেন, ‘আমি কখনও টাকার ব্যাপারে চিন্তিত ছিলাম না। অথচ সেখানে আমাকে ৪০ টাকা দিয়ে এক বেলা খাবার যোগাড় করতেও বেগ পেতে হয়েছে। তাছাড়া থাকার জন্য আমাকে প্রতিদিন আরও ২৫০ টাকা হোটেল-ভাড়া গুনতে হয়েছে’।

শেষ পর্যন্ত বাবার দেওয়া চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে গত মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন দ্রাভিয়া। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

/এফইউ/এএ/