ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, এ চুক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই দর কষাকষি চলছিল ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে। চলতি বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ প্রধান অতিথি হিসেবে নয়াদিল্লিতে এসেছিলেন। ওই সময় রাফাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাম নিয়ে দু’পক্ষ সহমত হতে না পারায় ওই সময় চুক্তি হয়নি। তবে উভয় দেশই এই চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছিল। ফলে আলোচনা চলছিল নির্দিষ্ট চ্যানেলে। দীর্ঘ আলোচনার পর চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ভারত ও ফ্রান্স চুক্তির বিষয়ে একমত হয়। তখনই জানানো হয়েছিল ২৩ সেপ্টেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। সেই ঘোষণা মতো শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর এবং ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যঁ ইভ লে দ্রিয়াঁ চুক্তি সই করলেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি স্বাক্ষরের দেড় বছরের মাথায় প্রথম দফার যুদ্ধবিমান হস্তান্তর করা হবে। ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে ফ্রান্সকে ৫৮ হাজার কোটি রুপি দেবে ভারত। এই অর্থও কিস্তিতে পরিশোধ করবে ভারত। অগ্রিম হিসেবে ভারত ৮ হাজার ৭০০ কোটি রুপি ফ্রান্সকে দেবে।
অবশ্য ৫৮ হাজার কোটি রুপিতে ভারত শুধু ৩৬টি যুদ্ধবিমান পাচ্ছে তা নয়। আনুষাঙ্গিক অস্ত্রশস্ত্রও ভারত ফ্রান্সের কাছ থেকে পাচ্ছে। সেই সব অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র। পৃথিবীতে যত রকমের আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, সেগুলির মধ্যে এই মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্রকে অন্যতম সেরা হিসেবে ধরা হয়। শব্দের বেগের চেয়ে চার গুণ জোরে ছোটে এই ক্ষেপণাস্ত্র। রাফাল যুদ্ধবিমান এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আকাশে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা শত্রু বিমানকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাফাল এবং মিটিওর-এর এই যুগলবন্দি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যের ছবি বদলে দেবে। রাফায়েল যুদ্ধবিমানের মতো ডাবল ইঞ্জিন মাল্টি-রোল অল ওয়েদার ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট আকাশে যে ভাবে দাপট দেখাতে পারে, ভারতের দুই প্রতিপক্ষ চীন এবং পাকিস্তানের কোনও যুদ্ধবিমানই তার ধারেকাছে আসে না। অনেক উচ্চতা থেকে এবং অনেক দূরত্ব থেকে ভূপৃষ্ঠে থাকা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে রাফাল। সঙ্গে মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র থাকায় রাফাল আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনও দেশের হাতেই ওই ক্ষেপণাস্ত্র নেই। তাই রাফাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হতেই চিন্তার রেখা বাড়ছে ভারতের দুই প্রতিবেশীর কপালে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীন এবং পাকিস্তানের যৌথ শক্তির মুখোমুখি হতে হলে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে অন্তত ৪২ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান থাকা দরকার। কিন্তু ভারতের হাতে এই মুহূর্তে রয়েছে ৩২ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান তাতেও ভারতীয় বিমানবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়াতে সক্ষম নয়। এককভাবে চীনা বিমানবাহিনীও খুব একটা এগিয়ে নেই। কিন্তু এই দুই দেশের যৌথ শক্তির কথা মাথায় রেখে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বাড়াতে চায়। ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান বিমানবাহিনীর হাতে আসার অর্থ আরও দু’টি স্কোয়াড্রন বৃদ্ধি পাওয়া। সূত্র: আনন্দবাজার।
/এএ/