এনডিটিভির অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের চুরিয়ান্তপুরে ২ হাজার রুপির একশ নোট ধরা পড়ে। এর চার দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল হাইওয়েতে একটি কুরিয়ারে ধরা পড়ে আরও ৯৬টি নোট। এর মধ্যে একটি ঘটনায় কুরিয়ারটি আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্য ঘটনায় পার্সেলটি সীমান্ত পার হয়ে যেতে সমর্থ হয়।
মালদার কালিয়াচাক ও মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলোতে অনুসন্ধান করে এনডিটিভি জানতে পারে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও তা চোরাচালানকারীদের ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম নয়। দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে জাল নোটের প্যাকেটগুলো ঢিল দিয়ে সীমান্তের ওপারে ফেলে দেওয়া হয়। পরে ওই প্যাকেট কেউ এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
সুশানি ও চুরিয়ান্তপুরের মতোআন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাগুলোকেই মূলত চোরাচালানকারীরা জাল নোট পাচারের জন্য ব্যবহার করে থাকে। বিএসএফ সূত্রে জানা যায়, এসব জাল নোটের সঙ্গে জড়িত ভারতীয়দের বেশিরভাগই সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন। সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারাও এসব জাল নোট পাচারের কাজ করে থাকেন। এছাড়া জাল নোটের সঙ্গে জড়িতরা অনেক সময় নিজেদের কাজ হাসিলের জন্যও গ্রামবাসীদের সহায়তা নিয়ে থাকে। দিনের বেলা এসব ব্যক্তি মাঠে কর্মরত কৃষকের ছদ্মবেশ নিয়ে থাকে। রাতের বেলা এরা কোনও ঝোপঝাড়ে কিংবা আমবাগানে লুকিয়ে থাকে। বাংলাদেশি সীমান্তেও একই চিত্রই পাওয়া যায়। সুযোগ বুঝে এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে জাল নোটের প্যাকেট আদান-প্রদান করে থাকে।
সুশানি গ্রামের বাসিন্দারা খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাদের গ্রামকে জাল নোট পাচারের জন্য ব্যবহার করা হয়। তারাও এর সঙ্গে জড়িতদের সহায়তা করতে বাধ্য হন কখনও কখনও। তারা মূলত চোরাকারবারী আর নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝখানে আটকরা পড়েছেন। এই গ্রামের অধিবাসী লালজান মিয়া বলেন, ‘ওরা (চোরাকারবারি) সবসময় আমাদের হুমকি দেয়। আমরা ওদের সাহায্য না করলে ওরা বিএসএফের কাছে আমাদের ফাঁসিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়ে থাকে।’
ওই গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমরা ওদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই ওরা জাল নোট আমাদের বাড়ির সামনে ছুড়ে দিয়ে বিএসএফকে খবর দেয়। পরে বিএসএফ এসে যার বাড়ির সামনে নোটগুলো পাওয়া যায় তাকে ধরে নিয়ে যায়।’
এদিকে, বিএসএফও সীমান্তের এই চোরাকারবারিদের নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। এখন পর্যন্ত জাল নোট চক্রের খুব অল্প কয়েকজনকেই তারা আটক করতে পেরেছেন এবং এর মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে বলে জানায় বিএসএফ। তাছাড়া জাল নোটের মানও অনেক উন্নত হয়েছে। ফলে জাল নোট ধরাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে বিএসএফের জন্য। শুধু তাই নয়, বিএসএফ আরও আশঙ্কা করছে যে জাল নোটের কারবারিরা পরীক্ষামূলকভাবে এই নোটগুলো বাজারে ছাড়ছে। যখন তারা নিশ্চিত হবে যে এসব নোট নিখুঁত হয়েছে, তখন মুহূর্তেই এসব জাল নোটের সরবরাহ ব্যাপক পরিমাণে বাড়িয়ে দেবে।
বিএসএফের (দক্ষিণবঙ্গ) ইনস্পেক্টর জেনারেল পি এস আর আনজানেয়ুলু এনডিটিভিকে বলেন, ‘তারা (জাল নোট চক্র) নতুন নোটের কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য জাল করতে পেরেছে, সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নয়। তারা নিশ্চিতভাবেই সঠিক কাগজ ব্যবহার করতে পারেনি। এই কাগজের টেক্সচারের মান দুর্বল। তবে একজন খুব সাধারণ ব্যক্তির কাছে এই নোটগুলোও আসল বলে মনে হতে পারে এবং খুব সতর্ক না থাকতে পারলে এগুলোকে জালনোট হিসেবে চিহ্নিত করাটা খুবই কঠিন।’
/টিআর/এমএনএইচ/