‘প্রেম’ যখন সন্ত্রাসের চেয়েও মরণঘাতী

ভারতের প্রেমঘটিত হত্যা ও আত্মহত্যার পরিসংখ্যানসন্ত্রাস বা জঙ্গি হামলার চাইতে ভারতে ভালোবাসার জন্য নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। ভালোবাসার জন্য দেশটিতে ঘটছে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যা, অপহরণ  ও হত্যাকাণ্ড।  সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি এক পরিসংখ্যানে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।

ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০১-১৫ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলায় সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার। বিপরীতে প্রেমঘটিত কারণে নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৫৮৫ জন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রয়েছে ৭৯ হাজার ১৮৯টি আত্মহত্যার ঘটনা। যেগুলোও প্রেমঘটিত মৃত্যু বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্রেমঘটিত কারণে ২ লাখ ৬০ হাজার অপহরণের ঘটনাও রয়েছে।

পরিসংখ্যানের তথ্য অনুসারে, ভারতের প্রতিদিন গড়ে ৭টি খুন, ১৪টি আত্মহত্যা ও ৪৭টি অপহরণের ঘটনা ঘটে প্রেমজনিত কারণে। প্রেমঘটিত কারণে খুনের তালিকায় রাজ্য হিসেবে শীর্ষে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। এর পরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশ। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। এ সময়ে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা প্ররোচনার জেরে আত্মহত্যা করেছেন রাজ্যটির ১৫ হাজার মানুষ। ৯ হাজার ৪০৫টি আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেমেও ৫ হাজারের বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতের ৩৫টির মধ্যে ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাষিত অঞ্চলে পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই প্রেমের বলি হয়েছেন বেশি।

প্রেমের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ভারতের জাতপাত ও পুরুষতন্ত্রকেরই দায়ী করছেন বিষেশজ্ঞরা। তাদের মতে, সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে প্রচলিত ‘নিয়ম’ ভাঙার সাহস যারা দেখিয়েছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারাই সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তথাকথিত সামাজিক সম্মানের জন্যই আপোস করতে হচ্ছে বহু নারীকে। আর তাতে মদত যোগাচ্ছে খাপ পঞ্চায়েতের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

দীর্ঘ দিন ধরে লিঙ্গভিত্তিক বিষয়ে গবেষণা করা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক উমা চক্রবর্তী জানান, বিয়ে করার মতো বিষয়েও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে। মানুষের অস্তিত্বকে দমিয়ে রাখতে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতার আসল কারণ খুঁজতে হলে পিতৃতন্ত্র ও জাতপাতের সমীকরণটা আগে ভালোভাবে বুঝতে হবে।

অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের জগমতী সাঙ্গওয়ান বলেন, ‘সমাজে জাতপাত ও শ্রেণিভেদ বাঁচিয়ে রাখতেই সহিংসতা হাতিয়ার করা হচ্ছে। আর এ সহিংসতার শিকার অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ানোর পরিবর্তে রাষ্ট্র নিপীড়নকারীদের মদত দিচ্ছে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এএ/