ভারতে ‘গো-রক্ষা’র নামে আলিমুদ্দিন হত্যায় বিজেপি নেতা গ্রেফতার

গো-রক্ষকদের তাণ্ডবে নিহত আলিমুদ্দিনগরুর মাংস বহনের অভিযোগে আলিমুদ্দিন নামের এক মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে ভারতের ঝাড়খণ্ডের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র এক স্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  শনিবার আরও দুই ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করে। রবিবার ঝাড়খণ্ডের পুলিশ একথা জানিয়েছে।  বৃহস্পতিবার পিকআপ ভ্যানে করে গরুর মাংস বহন করার অভিযোগে ভারতের তথাকথিত গো-রক্ষকরা আলিমুদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত বিজেপি নেতার নাম নিত্যানন্দ মাহতো। তিনি দলটির রামগড় ইউনিটের মিডিয়া ইন চার্জ। আলিমুদ্দিনের ওপর হামলা চালাতে মাহতো জনগণকে প্ররোচিত করেন।

এর আগে, আলিমুদ্দিন হত্যায় মূল অভিযুক্ত ছোট্টু রানা রামগড় আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিনের ঘটনায় যে ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে তাতে দেখা গেছে এই ছোট্টুই লাঠি দিয়ে বার বার আলিমুদ্দিনকে আঘাত করছে।

শনিবারই বিজেপির অপর এক নেতা পাপ্পু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে নিত্যানন্দ ও তার দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও গ্রেফতারের পর নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন নিত্যানন্দ। পুলিশের দাবি, ভিডিওতেই দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ মাহাতো মানুষকে উস্কানি দিচ্ছেন। আলিমনুদ্দিনকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে আনতেও দেখা গিয়েছে তাকে।

নিহত আলিমুদ্দিন ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে রামগড় জেলার বাসিন্দা। স্থানীয় কয়েকজন তার গাড়ি থামিয়ে এতে গরুর মাংস বহন করা হচ্ছে বলে অভিযোগে হামলা চালায়।

সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা আর.কে. মুল্লিক জানান, খবর পেয়ে তার লোকেরা আক্রান্ত ওই মুসলিমকে রক্ষা করতে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। লোকটিকে হামলাকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ‘এটা একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে শনাক্ত করেছি।’

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরদিন শুক্রবার তদন্তের জন্য রামগড়ের ডেপুটি পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনায় মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে ৮ জনকে এরই মধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর দু’দিন কেটে গেলেও বেশ কয়েকটি সংবেদশীল এলাকায় এখনও পুলিশি টহল চলছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, মহাত্মা গান্ধীর ভারতে গরু ভক্তির নামে হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। মোদির এমন হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টা পরেই আলিমুদ্দিনকে গরুর মাংস বহনের অভিযোগে হত্যা করা হয়। এর কিছুদিন গুজরাটের ফরিদাবাদে গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে জুনায়েদ নামের ১৫ বছরের এক কিশোরকে চলন্ত ট্রেনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা।

/এএ/