খাচ্ছেন না, কান্নাকাটি করছেন রাম রহিম

পাঁচদিন আগেও স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ছিলেন ভিভিআইপি। আদালতে উপস্থিত হতে এসেছিলেন বিরাট গাড়ির বহর নিয়ে। কিন্তু আদালতে পনেরো বছর আগের ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আর ফেরা হয়নি। শুক্রবারই জায়গা হয় কারাগারে। সোমবার ২০ বছর কারাদণ্ডের সাজা পেয়ে রোহতকের কারাগারে ঠাঁহ হয়েছে রাম রহিমের। ভিভিআইপি থেকে কয়েদি নম্বর ১৯৯৭ হয়ে যাওয়া রাম রহিম কারাজীবনের প্রথম রাতে কিছুই খাননি। শুধু কান্নাকাটি করেছেন।

gurmeet-ram-rahim-singh_650x400_71503468484

কারা সূত্রের বরাত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, কারাগারে কয়েদি সেলে নেওয়ার পর থেকেই কান্নাকাটি করে চলেছেন বিতর্কিত এই ধর্মগুরু। রাতে ভারী খাবার কিছু খাননি। কয়েক চুমুক দুধ আর কয়েক ঢোক পানি পান করেছেন।

রোহতকের ওই কারাগার থেকে সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া এক কয়েদি জানান, সাজা ঘোষণার পর থেকে কারও সঙ্গে কোনও কথাও বলছেন না ‘বাবা’। কোনও হামবড়া ভাবও দেখা যায়নি। শুক্রবার থেকেই রাম রহিমকে মন মরা দেখাচ্ছিল। কারও সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। ওই বন্দির ভাষায়, ‘খাবার বলতে শুধু দুধ আর পানি পান করেছেন। আর কিছু না। কারও সঙ্গে কথাও বলতে দেখিনি।’

আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, গত ২৫ বছর ধরে রাম রহিম ডেরা সচ্চার প্রধান ধর্মগুরু। এত বছরে ‘বাবা’ ছাড়া কোনও ডাকই তিনি শোনেননি। কিন্তু, সাজা ঘোষণার পর থেকে তিনি একটি ‘সংখ্যা’য় পরিণত হয়েছেন। আদালতের নির্দেশে দু’টি ধর্ষণের মামলায় সব মিলিয়ে তার ২০ বছরের জেলের সাজা ঘোষণা হয়েছে সোমবার। তার পর থেকে জেলের খাতায় তার নামের পাশে লেখা— কয়েদি নম্বর ১৯৯৭। জেলের ভিতরে কর্মীদের আলোচনাতেও নাকি ‘বাবা’কে ‘সংখ্যা’ ধরেই ডাকা হচ্ছে।

অনেকেই মনে করছেন, বিলাসী জীবন থেকে জেল কুঠুরিতে একাকীত্বের জীবন মেনে নিতে পারছেন না রাম রহিম। তাদের মতে, সনাতন ভারত থেকে এ কালের ভারত, রাম রহিম এখন একটি নাম ছাড়া কিছুই না।

ভক্তদের সঙ্গে বন্য পশুর আচরণ
ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেছেন, রাম রহিম নিজের ভক্তদের সঙ্গে বন্য পশুর মতো আচরণ করেছেন। তাই আদালতের কাছে সাজা মাফের আশা করতে পারেন না তিনি।

সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক সোমবার রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষেই বসে পড়ে কেঁদে ফেলেন রাম রহিম। বিচারকের কাছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ক্ষমা প্রার্থনাও করতে থাকেন। কিন্তু, তাতে প্রভাবিত হননি বিচারক। ডেরা প্রধানকে ক্ষমা করার কোনও প্রশ্নই নেই বলে জানিয়ে দেন তিনি। বিচারকের মতে, ‘(রাম রহিম) এমন এক জন মানুষ যিনি মানবিকতার পরোয়া করেন না। এমনকী, যার মনে কোনও দয়ামায়াও নেই, তিনি মার্জনার যোগ্য নন।’

বিচারক তার ৯ পাতার রায়ে আরও বলেছেন, ‌ডেরা সচ্চা সৌদার মতো একটি ধর্মীর প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে থেকে ভক্তদের সঙ্গে জঘন্য অপরাধ করেছেন তিনি। এর ফলে দেশের ধর্মীয়, পবিত্র, আধ্যাত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভাবমূর্তিতেও ধাক্কা লাগতে বাধ্য।’

সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার রায় থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারক জানান, ধর্ষণ কেবলমাত্র একটি শারীরিক নির্যাতন নয়। এটি নির্যাতিতার গোটা ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে দেয়। সমাজের স্বার্থেই এই ধরনের অপরাধের যোগ্য শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন বিচারক। সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা।