আসাম তাড়িয়ে দিলে পশ্চিমবঙ্গ জায়গা দেবে: মমতা

আসামের বিজেপি শাসিত সরকারের কঠোর সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সত্যিকারের নাগরিক হওয়ার পরও বাংলা ও হিন্দি ভাষাভাষী মানুষদের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আসাম এসব মানুষদের তাড়িয়ে দিলে পশ্চিমবঙ্গ তাদের জায়গা দেবে। মঙ্গলবার আসামের সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ার জেলায় এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন তিনি।

আলিপুরদুয়ারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি- শিলিগুড়ি টাইমস

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আসামে রাজ্যটির আদিবাসীদের নামে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের তাড়িয়ে ও দেওয়া নিপীড়নের একটা প্রবণতা হয়েছে। নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন (এনআরসি) থেকে সত্যিকারের অনেক নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামের ৩ কোটি ৩৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১ কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দাকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা ও হিন্দি ভাষাভাষী মানুষরা।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তারা এমনভাবে কী করে তাড়িয়ে দিতে পারে? আমি সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেখানে (আসাম) নিপীড়নের শিকার হয়ে কেউ যদি এখানে (পশ্চিমবঙ্গ) আসেন, দয়া করে তাদের আশ্রয় দেবেন। তাদেরকে তাড়িয়ে দেবেন না।

ভাষণে মমতা বিজেপি ও তাদের হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সমালোচনাও করেন। তিনি দাবি করেন, এই দুই সংগঠনের অর্থায়নে একটি এনজিও উপজাতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা প্রদানের নামে আরএসএস’র মতাদর্শ ছড়াচ্ছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তিন কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে এক কোটি ৯০ লাখের নাম সম্বলিত এনআরসির প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করে আসামের বিজেপি শাসিত সরকার। আসাম সরকার জানিয়েছে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে আসামে পরিবারের সদস্যদের বসবাসের প্রমাণ দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে তাদের।

৩১ ডিসেম্বর আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়াটি প্রকাশ হয়। তালিকায় আবেদনকারীদের মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখের স্থান হয় কিন্তু বাদ পড়েন ১ কোটি ২৯ লাখ। রাজ্য সরকারের মতে, পূর্নাঙ্গ নাগরিক তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তাদেরকে ‘অবৈধ’ অভিবাসী হিসেবে বিচেনা করা হবে।

এনআরসি তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে ক্ষোভ জানিয়ে ৩ জানুয়ারি বিরভূমে এক সমাবেশে মমতা অভিযোগ করেন, ইচ্ছে করেই আসাম থেকে বাঙালিদের তাড়ানো হচ্ছে। বাঙালিদের নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পুরনো ‘বাঙালি হটাও’ অভিযান পুনর্জাগরিত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আসাম সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘একটি রাজ্যে ৩০/৪০ বছর ধরে বসবাসকারীদের কেন আবার ভোগান্তিতে ফেলতে হবে?’

মমতার এই মন্তব্যের পর আসামে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আসামের গুয়াহাটির উচ্চ আদালতের আইনজীবী তৈলেন্দ্র নাথ দাস এবং পুলিশ যৌথভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ (এ) ধারায় মমতার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।