ভারতীয় গ্রাহকদের সঙ্গে সময় কাটাবেন ট্রাম্পের ছেলে

বিলাসবহুল ট্রাম্প টাওয়ারে যারা ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন তাদের সঙ্গে দিল্লিতে সময় কাটাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে। দিল্লিতে ট্রাম্পের ওই প্রকল্পের জন্য নিয়োগকৃত ভারতীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রতিনিধি জানান, বিনিয়োগকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই এমন আয়োজন করেছে তারা। অবশ্য সমালোচনাও হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম ব্যবহার করে এমন বাণিজ্য করার। বিবিসি ও বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ খবর। 

trump tower

চলতি সপ্তাহে দিল্লিতে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এই বিশেষ আয়োজন করা হবে। সেখানে তারা ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে রাতের খাবার খাবেন। দিল্লির নির্মাণাধীন বহুতল বিলাসবহুল ভবনটিতে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী প্রথম ১০০ জনের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা করেছে ট্রাম্প জুনিয়রদের ভারতীয় প্রচার সহযোগী ট্রাইবেকা। প্রচারণার জন্য তারা পত্রিকায় পুরো পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো। সেখানে তারা লিখেছিল, ‘ট্রাম্প আসছেন, আপনি আমন্ত্রণ পেয়েছেন তো?’

দিল্লির উপকণ্ঠ গুরগাওয়ে নির্মিতব্য ট্রাম্প টাওয়ারে ২৫০টির মতো ফ্ল্যাট থাকবে। ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৭ কোটি থেকে ৯ কোটি টাকা পর্যন্ত। ২০২৩ সালে শেষ হবে এর নির্মাণ কাজ। দিল্লির ট্রাম্প টাওয়ারে সবচেয়ে কম দামি ফ্ল্যাটটি কিনতেও প্রায় ৩২ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। সাধারণ ভারতীয়দের জন্য এই টাকা সাধ্যের বাইরে। তারপরও ৭৫ জন ভারতীয় ইতোমধ্যেই ট্রাম্প টাওয়ারে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছে। ট্রাইবেকা বলেছে, তারা আশা করছে বৃহস্পতিবার এই বিশেষ সুযোগের সময় শেষ হওয়ার আগেই বাকি ২৫ জন আগ্রহী ক্রেতাকে তারা পেয়ে যাবেন। ট্রাইবেকার তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘নির্মাণাধীন ভবনটির বিষয়ে আমদের উপর অপরিসীম আস্থা রেখেছেন ক্রেতারা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমাদের এই আয়োজন।’

সমালোচনাও কুড়িয়েছে এই বিজ্ঞাপনী কৌশল। জর্জ বুশের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের হয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নীতি নির্ধারণী কাজ করা ড্যানিয়েল এস মার্কে বলেছেন, ভারতে ট্রাম্পের ছেলের এ ধরণের ব্যবসায় যুক্ত হওয়ায় তিনি বিস্মিত।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘দ্যা সিটিজেন ফর রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস’ ওই বিজ্ঞাপন নিয়ে কথা বলেছে। তারা জানায়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের নাম ব্যবহারের প্রমাণ এই বিজ্ঞাপন। এমন আরও প্রমাণের যে তালিকা তারা করেছে সে তালিকায় ওই বিজ্ঞাপনকেও যুক্ত করা হয়েছে।

ট্রাম্প জুনিয়র অবশ্য বলছেন অন্য কথা, ‘আমি ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছি অনেক আগে থেকে। সে চেষ্টারই ফল এই ব্যবসায়িক সাফল্য।’

উল্লেখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের একজন বক্তা হিসেব নাম রয়েছে ট্রাম্প জুনিয়রের। সে সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আমন্ত্রিত অতিথি।

এর আগে ট্রাম্পের মেয়ে হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত একটি উদ্যোক্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সমালোচকরা সেটা ভালোভাবে নেয়নি। ট্রাম্পের নামের কারণে তার মেয়ে ইভাঙ্কাই সব মনোযোগ পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছিল, এতে আলোচনার মূল বিষয় গৌণ হয়ে পড়ে।

দিল্লি ছাড়াও মুম্বাই, পুনে ও কলকাতার মতো ভারতের বড় শহরগুলোতে ট্রাম্প টাওয়ারের নামে নির্মাণ কাজ চলছে। সবগুলোতেই স্থানীয় সহযোগীরা আছে। তাদেরকে ট্রাম্প টাওয়ার নামটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার বদলে মুনাফার একটা অংশ নেবে ট্রাম্পদের প্রতিষ্ঠান। ভারতে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করতে প্রায় ১ হাজার ২শ ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থকে ট্রাম্পের ছেলেরাই তার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প পরিবার ভারত থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা পেয়েছিল।