ট্রুডোর ঘটনায় ‘দুঃখিত’ সেই সাবেক শিখ বিদ্রোহী

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভারত সফরের সময় যে সাবেক শিখ বিদ্রোহীকে কেন্দ্র করে শীতলতা তৈরি হয়েছিল সেই জাসপাল আতওয়াল জানিয়েছেন, ট্রুডোর অপমানে তিনি দুঃখিত। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক জাসপাল আতওয়ালকে ট্রুডোর ভারত সফরকালে দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আতওয়ালের বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালে ভারতের একজন মন্ত্রীকে হত্যা করার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

জাসপাল আতওয়াল

আতওয়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিক্রিয়ায় সরকারের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তুষ্টি নিরসনে ওই নিমন্ত্রণ বাতিল করা হয়েছিল।  জাসপাল আতওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আতওয়ালের নিমন্ত্রণ পাওয়াকে কেন্দ্র করে ভারত সফরে থাকা ট্রুডোকে সফরের ৬ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর দেখা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে জাসপাল আতওয়াল বলেছেন, তাকে কেন্দ্র করে যদি ভারত সফরে আসা কানাডার প্রধানমন্ত্রী কোনও অপমানের শিকার হয়ে থাকেন সেজন্য তিনি দুঃখিত। তার ভাষ্য, ‘এই বিষয়টি নিয়ে কানাডা, ভারত, আমার সম্প্রদায় ও আমার পরিবারের কেউ যদি আহত হয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি সবধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে চলে এসেছি। স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে আমি কোনও কাজ করছি না। আমি সহ যে বিপুল সংখ্যক শিখ একসময় ওই বিষয়টিকে সমর্থন করত তারা এখন ভারতকেই দেশ হিসেবে মেনে নিয়েছে।

দিল্লিতে কানাডার হাইকমিশন কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে আতওয়ালকে আমন্ত্রণ জানানোয় বিব্রত হতে হয়েছিল সফরকারীদের। ভারতের অসন্তুষ্টির কথা জানতে পেরে দ্রুত ওই নৈশভোজ বাতিল করে দিয়েছিল কানাডার হাইকমিশন। এ ঘটনায় ট্রুডো তার দলের একজন এমপিকে দায়ী করে বলেছিলেন, ওই এমপিই আতওয়ালের নিমন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছেন।

জাসপাল আতওয়াল ১৯৮৬ সালে কানাডায় ভারতের মন্ত্রী মালকায়েত সিং সিধুকে ভ্যাঙ্কুবারে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ১৯৯২ সালে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তার রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আতওয়াল বলেছিলেন, ভারতীয়-কানাডীয়দের জন্য কাজ করতেই রাজনীতিতে তার আবির্ভাব হয়েছে। তার দাবি, গত বছরে তিনবারসহ তিনি ভারতে গিয়েছেন বহুবার। তার দাবি প্রত্যেকবারই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি সফরে গেছেন। কখনো কেউ কোনও আপত্তি করেনি। ভারতে ট্রুডোর সঙ্গে ডিনারে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে কি না তা জানতে আতওয়াল স্থানীয় সংসদ সদস্যের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কানাডার ওই সংসদ সদস্যই ডিনারে আতওয়ালের নিমন্ত্রণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কানাডার সিবিসিনিউজ তাদের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকাশ করেছিল।  ওই সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করতে ভারতের ভেতর থেকেই জাসপাল আতওয়ালকে সাহায্য করা হয়েছিল। যাতে তিনি ট্রুডোর সঙ্গে দেখা করতে ভারতে ঢোকার সুযোগ পান। জাসপাল আতওয়াল ভারতের নিষিদ্ধ তালিকায় ছিল। তার ভারতে ঢুকতে পারারই কথা ছিল না। শিখদের মন্ত্রীসভায় রাখা ট্রুডোর ওপর ভারতের একটি মহল অসন্তুষ্ট। ট্রুডো ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এমনটা দেখাতেই তারা আতওয়ালকে ভারতে ঢুকতে দিয়েছিল।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কানাডার সরকারের তরফ থেকে দেওয়া ওই বক্তব্য সমর্থন করেছিলেন। আর ভারত বলেছিল, এরকম দাবি ভিত্তিহীন।