রমজানে কাশ্মিরে সামরিক অভিযান স্থগিত রাখবে ভারত

কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পবিত্র রমজান মাসে সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করলো দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে। গত কয়েক মাস কাশ্মিরে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনায় চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এই ঘোষণা দিলো ভারত।

af12ec5188fb4d11815ebdc43eb468ed_18

বুধবার একাধিক টুইটে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘এই ঘোষণা শান্তিপ্রিয় মুসলিমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রমজান পালন করতে পারবেন।’ তবে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘যদি হামলা চালানো হয় তাহলে পাল্টা হামলা চালানোর অধিকার রয়েছে’ ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর। কাশ্মিরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রায় ৫ লাখ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

কাশ্মির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বুধবার জানান, তিনি আশা করছেন ভারতের এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদি সংলাপের জন্য শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

তাৎক্ষণিকভাবে কাশ্মিরের বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

২০০০ সালে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ও বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের মধ্যে এটাই প্রথম অস্ত্রবিরতি।

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মিরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সাল থেকে তথাকথিত সীমান্ত রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) দ্বারা কাশ্মির বিভক্ত রয়েছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে গত কয়েক মাসে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, গত বছর হতে এ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে ২৭০ জনের বেশি বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। এই মাসের শুরুতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৫ বেসামরিক ও ৫ বিদ্রোহী নিহত হয়। এই ঘটনার মাত্র এক মাস আগে চার বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনায় কাশ্মিরজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

উল্লেখ্য, কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামিকরণ হয়েছে। এখন সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদিন সবচেয়ে সক্রিয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মিরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতার থেকে আলাদা করে শনাক্ত করে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে।