কাশ্মিরের বিশেষ আইন বাতিলে উত্তেজনা, ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ঘোষণা

বিশেষ নাগরিক অধিকার রক্ষায় প্রচলিত একটি আইন শীর্ষ আদালতে বাতিলে আশঙ্কায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সোমবার এই বিষয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেবেন। জম্মু ও কাশ্মিরের অনুচ্ছেদ ৩৫-এ আইনে স্থায়ী বাসিন্দাদের সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং তাদের বিশেষ অধিকার ও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে রাজ্যের বাসিন্দা ছাড়া কেউ সম্পত্তি ক্রয় এবং সরকারি চাকরিতে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এই আইন বাতিলের জন্য একটি আপিলের পর এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই আইন বাতিল হলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, জম্ম-কাশ্মিরের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ ও বাসিন্দারা এই আইন বাতিল হলে প্রতিবাদে বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।

28d64a68dafd4c2d8902af7df4b60a02_18

কাশ্মিরের ব্যবসায়ীদের জোট ইকোনমিক অ্যালায়েন্সের প্রধান ইয়াসিন খান বলেন, আমরা এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ করছি। কাশ্মিরের ভৌগলিক চরিত্র পাল্টানোর কোনও ধরনের পদক্ষেপ ও ফিলিস্তিনের মতো পরিণত করার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না।

হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত উই দ্য সিটিজেন নামের একটি এনজিও আদালতে আইন বাতিলের এই আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, আইনটি উচ্চমাত্রায় বৈষম্যমূলক। ফলে তা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হোক।

এনজিওটি আদালতের আবেদনে আরও জানিয়েছে, আইনটি ভারতের অখণ্ডতার বিরোধী এবং ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বিশেষ শ্রেণি তৈরি করছে।

এদিকে, কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো যাদের কেউ পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রিত হতে চায়, আবার কেউ স্বাধীন রাষ্ট্র চায় তারা ৫ আগস্ট থেকে দুই দিনের ধর্মঘট ডেকেছে। তারা হুঁশিয়ারি জানিয়েছে, যদি আইনটি বাতিল করা হয় তাহলে গণবিক্ষোভ শুরু হবে।

তিন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি গিলানি, মিরওয়াইজ উমর ফারুক ও মোহাম্মদ ইয়াসিন মালিকেরজোট জয়েন্ট রেসিস্ট্যান্স লিডারশিপের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের কাছে আমরা এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, কাশ্মিরা এই হামলা মাথা পেতে নেবে না। কাশ্মিরের ভৌগলিক চরিত্র বদলানোর যে কোনও পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা আমাদের হত্যা করতে পারবে, আটক করতে পারবে। কিন্তু চাপের মুখে নতি স্বীকার করাতে পারবে না। আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আটক হতেও পিছপা হবো না।

আল জাজিরা জানিয়েছে, বড় ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলন হলে তা সহিংসতা, হরতাল ও কারফিউতে রূপ নিতে পারে।

কাশ্মিরি আইনজীবীদের হয়ে আদালতে আইনটি বহাল রাখার জন্য লড়বেন আইনজীবী জাফর শাহ। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, বিতর্কিত অঞ্চলে রাজনৈতিক ইস্যু বজায় রাখার জন্য এই আইনটি বহাল থাকা জরুরি। এই আইনটিই কাশ্মিরের পরিচয় এবং সংবিধানের এই ধারাটিই চারটি অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। আইনে কোনও পরিবর্তন হলে এসব অধিকার হারাবে কাশ্মিরিরা। এই আইন বাতিল হলে জাতিসংঘ স্বীকৃত কাশ্মিরের বিরোধ নিয়ে জনগণ ও সাংবিধানিক ইতিহাসে প্রভাব ফেলবে।

এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন কাশ্মিরের শেষ রাজা মহারাজা হরি সিং। ১৯২৭ সাল থেকে এই আইন জারি আছে। পরে স্বাধীনতার পর তা ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত করা হয় এবং ১৯৫৪ সালে তা গৃহীত হয়।

তবে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কাশ্মিরিদের আশঙ্কা ও ভয়ের কথা উড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্যটির বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অশোক কৌল বলেন, যারা সমালোচনা করছে তারা মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। কেউ চাকরি হারাবে না। বিষয়টি এখন আদালতের কাছে। আদালত যে রায় দেবেন তা আমরা মেনে নেব। প্রতিবাদের কোনও কারণ নেই। আইন পরিবর্তন হলেও কিছুই বদলাবে না। ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে কাশ্মির আলাদা কিছু না।

ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মির নিয়ে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছিল। ১৯৮৯ সাল থেকেই ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সেখানকার বিদ্রোহীরা লড়াই করছে। গত ২০ বছরের সহিংসতায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে যাদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক।

এই আইন বাতিলের ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, পরিবহন সমিতি ও ফল উৎপাদকদের ২৭ টি সংগঠনে প্রতিনিধিরা আইনটি বহাল রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আইনটি জম্মু-কাশ্মিরের জনগণের জন্য জীবন-মৃত্যুর মতো বিষয়। আইনটি রক্ষায় আমরা রক্ত দিতেও প্রস্তুত আছি।

স্থানীয় আশঙ্কা, আইনটির পরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক বিরোধ থেকে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরে যাবে। ২৮ বছরের স্থানীয় যুবক দানিশ আহমদ বলেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা এই আইন বাতিল করতে চাইছে এখানে আসার জন্য। তারা এখানকার রাজনৈতিক বিরোধের প্রকৃতি পাল্টে দিতে চায়। এটাই কাশ্মিরিদের উদ্বেগের কারণ।