নাগরিকত্ব আইন

লোকসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিজেপি

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্ব ভারতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। মঙ্গলবার লোকসভায় পাস হওয়া  নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ পাস হওয়ার পর এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

5ad4f9aa-07bc-4744-8da2-9ac5f1b000b2

পাস হওয়া নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে কয়েক দশক ধরেই ‘বহিরাগতদের’ প্রভাব বিদ্যমান। অনেকেই এদেরকে অবৈধ অভিবাসী বলে আখ্যায়িত করেন। আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই আইন পাস হওয়ার ফলে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই ভারতে পাড়ি জমানো শুরু করতে পারেন। এতে করে স্থানীয় জনগোষ্ঠী হুমকির মুখে পড়বে।

গত কয়েক মাস ধরেই বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আইনটির বিরোধিতা করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার বিলটি পাস হওয়ার পর ছাত্রদের ডাকা হরতালে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারত কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল।

তৃণমূলে আইনটির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান থাকলেও বিজেপি সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই তা পাসের উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনে অঞ্চলটিতে ২১ থেকে ২৫টি আসন জয়ে বিজেপির লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মনিপুর ও ত্রিপুরায় ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে তাদের জোট ক্ষমতায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের বিজেপি এই অঞ্চল থেকে ৮টি আসনে জয়ী হয়েছিল, সাতটি আসামের ও একটি আসন অরুণাচল প্রদেশে।

সবচেয়ে বড় আঘাত আসতে পারে আসামে। এখানে রয়েছে লোকসভার ১৪টি আসন। সোমবার অসম গণ পরিষদ (এজিপি) বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে এবং দলটির সাবেক এক মুখ্যমন্ত্রী নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

প্রফুল্ল কুমার মহন্ত বলেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গে আমাদের দলের জোট ছিল। জনগণ আমাদের জোটকে ভোট দিয়েছে এবং তা ক্ষমতায় এসেছে। বিজেপি দাবি করতে পারে না তারা নিজেরাই জিতেছে। আমরা যখন জোট ছেড়ে দিয়েছি তখন তাদের উচিত নতুন করে জনমত যাচাই করা।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল পিপল’স পার্টির (এনপিপি) সভাপতি মঙ্গলবার পাস হওয়া আইনটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এর কারণে বিজেপির সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। এনপিপি নেতৃত্বাধীন সরকারের জোটসঙ্গী বিজেপি। এর আগে রাজ্যের মন্ত্রিসভায় আইনটির বিরোধিতা করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। এখানে লোকসভার দুটি আসন রয়েছে। মনিপুরেও এনপিপি’র চারজন এমএলও রয়েছেন। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের জোটসঙ্গী এনপিপি।

ত্রিপুরায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের জোট সঙ্গী পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা। এই দলটিও আইনটির বিরোধিতা করেছে। এখানে লোকসভার দুটি আসন রয়েছে।

মিজোরামে ক্ষমতায় রয়েছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)। তারাও বিলটির বিরোধিতা করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারের হরতালে সমর্থন জানিয়েছেন। এখানে লোকসভার একটি আসন রয়েছে।

নাগাল্যান্ডে ন্যাশনালিস্ট প্রগ্রেসিভ পার্টির (এনডিপিপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের জোটসঙ্গী বিজেপি। মঙ্গলবার রাজ্যের মন্ত্রিসভা আইনটি পর্যালোচনার জন্য কেন্দ্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে লোকসভা নির্বাচনে। বিজেপির পেমা খান্ডু নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভোটারদের মুখোমুখি। ২০১৪ সালে  খান্ডু ও অন্যরা কংগ্রেস থেকে নির্বাচন করে সরকার গঠন করেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বাড়ি এই রাজ্যে। এখানে লোকসভার দুটি আসন রয়েছে।

গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক গোপাল মহন্ত বলেন, এই মুহূর্তে উত্তরপূর্ব ভারতের অবস্থা উত্তপ্ত। মানুষ বিরক্ত ও সংক্ষুব্ধ। এই মনোভাব যদি নির্বাচন পর্যন্ত থাকে তাহলে আসাম ও এই অঞ্চলের অন্য রাজ্যে বিজেপির ভাগ্যে তা প্রভাব ফেলবে।