আসামকে আরেকটি কাশ্মির হতে দিতে চাই না: অমিত শাহ

আসামের লাখিমপুরে আয়োজিত এক জনসভায় ‘ভারতীয় জনতা পার্টির’ (বিজেপি) সভাপতি আমিত শাহ বলেছেন, তার দলের সরকার আসামকে আরেকটি কাশ্মির হয়ে উঠতে দিতে চায় না। আর তাই কাশ্মির সংকটের জন্য দায়ী ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মতো আসামে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ চিহ্নিত করতে নাগরিকত্ব তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস’ (এনআরসি) অনুযায়ী সব অনুপ্রবেশকারীকে বের করে দেওয়া হবে। দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, অমিত শাহ এনআরসিকে শুধু আসাম বা উত্তর-পূর্বের অঞ্চলের জন্য নয় বরং পুরো ভারতের জন্যই প্রযোজ্য বলে মনে করেন।Amit-Shah1
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে গত ৮ জানুয়ারি ভারতের লোকসভায় ‘সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৬’ পাস করা হয়েছে। এতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি পাসের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ‘পালাতে বাধ্য হওয়া’ হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ইতোমধ্যে আসামের যে নাগরিকত্ব তালিকা করা হয়েছে তা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এনআরসির সমর্থকরা মনে করে, এরা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসামে গিয়েছে।
বিজেপি প্রধান অমিত শাহের গত শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া ভাষণ দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রে থাকা মোদি সরকার আসামকে আরেকটি কাশ্মির হতে দিতে চায় না। তাই তারা এনআরসি বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ চিহ্নিত করে আসামকে এমন ‘বহিরাগতদের’ হাত থেকে মুক্ত করবে বিজেপি। তার ভাষ্য, ‘আমরা আসামকে আরেকটি কাশ্মির হয়ে উঠতে দিতে পারি না। এটা আমাদের নীতি। যতবার দরকার ততবার আমরা এনআরসি হালনাগাদ করব। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে আসাম থেকে বের করে দেবো।’
অমিত শাহ তার ভাষণে কংগ্রেস এবং দলটির সাবেক সহযোগী ‘আসাম গণপরিষদের’ সমালোচনা করেছেন। তার অভিযোগ, ১৯৮৫ সালে ‘আসাম অ্যাকর্ড’ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বেশিরভাগ সময়টাই তারা আসামে সরকার চালিয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে কোনও ভূমিকা রাখেনি। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ডে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে থেকে যারা আসামে বাস করছে, তারাই শুধু নাগরিকত্ব পাবে।
অমিত শাহ মনে করেন, এনআরসি নিয়ে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। এনআরসি শুধু আসাম বা ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার জন্য প্রযোজ্য কোনও বিষয় নয়। বরং পুরো ভরাত জুড়েই এনআরসি কার্যকর করা হবে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বের করে দেওয়ার জন্য। অমিত শাহ মনে করেন, নাগরিকত্ব তালিকা যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে আসামের জনসংখ্যার প্রকৃতি এমনভাবে পাল্টে যাবে যা আসামকে বিপদে ফেলবে।
এসময় তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরে হওয়া হামলার বিষয়েও কথা বলেন। আত্মঘাতী ওই বোমা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৪০ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। অমিত শাহের দাবি, যেহেতু এখন কেন্দ্রতে কংগ্রেস সরকার নয় বরং বিজেপি সরকার রয়েছে, সেহেতু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। জঙ্গিবাদকে ভারত থেকে সমূলে উৎপাটন করা হবে।