অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার অযোধ্যার বিতর্কিত ভূমিতে রাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। উত্তর প্রদেশের এই এলাকাটিকে হিন্দু ধর্মালম্বীরা দেবতা রামের জন্মভূমি হিসেবে মনে করেন। বড় ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তিন দশক আগে দেওয়া তাদের একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এখবর জানিয়েছে।

6666

রাম মন্দির নির্মাণ আন্দোলনের শুরুর দিকে নেতৃত্ব দেওয়া বিজেপি নেতা এলকে আডবানি ও মুরলি মনোহর ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে স্বশরীরে হাজির হননি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে তারা সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে দেখেছেন। করোনায় আক্রান্ত দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও টিভিতে অনুষ্ঠান দেখেছেন হাসপাতালের বিছানা থেকে।

মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে পুজোতে পৌরোহিত্য করেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর রূপোর তৈরি প্রথম ইঁটটি গাঁথেন তিনি। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাম মন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়া হলো রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি প্রয়াস। নরকে নারায়ণের সঙ্গে, জনগণকে আস্থার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া।

মোদি আরও বলেন, হাজার বছর আগে বাল্মিকীর রামায়ণ প্রাচীন ভারতকে যেভাবে পথ দেখিয়েছিল, যে রাম মধ্যযুগে তুলসীদাস, কবিরের লেখনীতে উঠে এসেছিলেন, সেই রামকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে মহাত্মা গান্ধীর ভজনে অহিংসা আর সত্যাগ্রহের শক্তি হিসেবে দেখা গিয়েছে।  

ভাষণে মোদি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবজীবনে আমরা যখন রামকে মেনে চলেছি, তার আদর্শের পথে আমারা থেকেছি তখনই উন্নয়ন হয়েছে। সেই পথ থেকে বিভ্রান্ত হলেই বিনাশ হয়েছে। আমাদের সবার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে, সবার সঙ্গে থেকে সবার উন্নতি করতে হবে। সবার আস্থা অর্জন করতে হবে।

‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলে ভাষণ শুরু করা মোদি বলেন, আজ পুরো ভারত রাম ময়। পুরো দেশ রোমাঞ্চিত। প্রত্যেকের মনে যেনও দীপাবলী। বহু বছরের অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসই হয়তো হচ্ছে না যে জীবদ্দশায় তাদের এই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। অনেক বছর ধরে কাঠ আর তাঁবুর নিচে থাকা রামলালার জন্য এবার মহামন্দির নির্মাণ। ভাঙা গড়ার মধ্যে দিয়ে উঠে আসা এই মন্দির ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ভগবানের রামের অদ্ভূত শক্তি দেখুন। ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অস্তিত্ব মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু রাম এখনও আমাদের মনে রয়েছেন। আমাদের সংস্কৃতির আঁধার তিনি। ভারতের মর্যাদা পুরুষোত্তম হলেন ভগবান রাম।

উল্লেখ্য, অযোধ্যার যে ভূমিতে রাম মন্দির নির্মিত হচ্ছে তা নিয়ে কয়েক দশক ধরে হিন্দু ও মুসলমানদের বিরোধ ছিল। ১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা জমিটিতে থাকা ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদ ভেঙেও ফেলে। জমির মালিকানা নিয়ে কয়েক দশকের বিরোধ শেষে গত বছর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জমিটিতে রামমন্দির নির্মাণে সবুজ সংকেত দেয়। রায়ে মসজিদ নির্মাণে মুসলমানদের অযোধ্যারই অন্য কোথাও জমি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।