দেশীয় টিকা নিতে চান না ভারতীয় চিকিৎসকদের একাংশ

দেশীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্সিন টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকদের একাংশ। দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন এই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় তারা এটি গ্রহণ করতে অনাগ্রহী। এর পরিবর্তে ভারতে অনুমোদন পাওয়া অপর টিকা কোভিশিল্ড গ্রহণ করতে চান তারা। এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসকরা। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। শনিবার সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। টিকাদান কর্মসূচিতে দুইটি কোম্পানির টিকা সরবরাহ করছে ভারত। এগুলো হচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন।

চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা অতিক্রম করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড ভারতের পাশাপাশি ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেয়েছে। এই টিকাটি গণহারে তৈরি করছে পুনের সেরাম ইন্সটিটিউট। তবে কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান থাকলেও এর ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। তার আগেই ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেয়েছে টিকাটি। এ নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে দেশাত্মবোধের জিগির এবং দেশের স্বার্থরক্ষার কথা এবং সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ সেই বিতর্ক।

এমন অবস্থায় দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে তাদের কোভিশিল্ড টিকা প্রয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফলাফল সামনে আসার পরই এটি গ্রহণ করতে চান তারা। তার আগে টিকা প্রদান করতে চাইলে কোভিশিল্ড প্রয়োগের দাবি জানান তারা।

এদিকে ভারতীয় হাসপাতালগুলোর আবাসিক চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্মলা মহাপাত্র জানিয়েছেন, দেশজুড়ে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা নিতে আগ্রহীদের তালিকায় বহু চিকিৎসক নাম দেননি। তিনি বলেন, ‘কোভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা সংশয়ী। পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। কোভ্যাক্সিনের চেয়ে আমরা কোভিশিল্ডকে বেশি পছন্দ করছি।’

কোভ্যাক্সিন অনুমোদনের সময় ভারত সরকার জানায় কেবল জরুরি ব্যবহারের জন্যই টিকাটি প্রয়োগ করা হবে। তবে টিকাদান কর্মসূচির শুরুতে এর গ্রহীতা দুটি টিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। কেবল দিল্লিতেই কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ছয়টি সরকারি কেন্দ্রে কোভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। অপরদিকে রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি স্থাপনাসহ ৭৫টি কেন্দ্রে প্রয়োগ হচ্ছে কোভিশিল্ড। উল্লেখ্য, রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত।

চিকিৎসকদের আগ্রহের প্রতি ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, ‘এগুলোর মতো সাধারণ ইস্যুতে আমরা নজর দিচ্ছি না। মানুষের গুজবে বিশ্বাস করা উচিত হবে না। এসব টিকা তৈরি করতে প্রচুর কাজ করতে হয়েছে।’ পছন্দ অনুযায়ী টিকা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।