ভারতে করোনা সুনামিতে চোখ রাঙাচ্ছে 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস'

মারণ ভাইরাস করোনা মহামারিতে এমনিতেই বিপর্যস্ত ভারত। এই পরিস্থিতিতে দেশটির চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এক বিরল সংক্রমণের কথা, মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে আরও এক মারণ ছত্রাক। 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' নামের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।

মিউকোরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মূলত মিউকোরমাইসেটেস নামক ছত্রাক থেকেই এই রোগ হয়। এটি মাটিতে, চারা গাছে, পচনশীল পল ও সবজিতে থাকে।

মুম্বাইভিত্তিক চোখের সার্জন ড. অশোক নায়ের জানান, এটি মাটিতে ও বায়ুতে থাকে। এমনকি সুস্থ মানুসের নাক ও মিউকাসে এটির উপস্থিতি রয়েছে।

এই ছত্রাকটি মানুষের সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। ডায়বেটিক ও ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস রোগীর জন্য এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

ভারতীয় চিকিৎসকদের ধারণা, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমনে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ। করোনায় গুরুতর আক্রান্তদের ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের বহুল ব্যবহারের কারণে এই সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

ভারতীয় চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, মিউকোরমাইসিসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণে বেশি সমস্যায় পড়ছেন আইসিইউতে থাকা রোগীরাই। বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা হার্টের সমস্যার মতো কোন রোগ থাকে, তারাই বেশি আছেন এই সংক্রমণের ঝুঁকিতে।

কোভিড ভাইরাসের কারণে যখন রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম থাকে, তখন সেই ব্যক্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণে আক্রান্ত হলে সেটি মূহুর্তের মধ্যেই মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

ড. নায়ের বলেন, ডায়বেটিস শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, করোনাভাইরাস সেটিকেও আরও কমিয়ে ফেলে। এরপর করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করা স্টেরয়েড তেলে আগুন জ্বালানোর মতো কাজ করে।

মুম্বাইয়ের তিনটি হাসপাতালে কাজ করা এই চিকিৎসক জানান, এপ্রিলে এই ছত্রাকের সংক্রমণে ৪০জন রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ ডায়বেটিকস রোগী এবং অনেকে বাড়িতে থেকে করোনামুক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে এগারোজনের চোখ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছে।

ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে ডা. নায়েরের ছয়জন সহকর্মী ৫৮জন আক্রান্তের কথা জানিয়েছেন। এদেরও বেশিরভাগই করোনামুক্ত হওয়ার ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ছত্রাকটিতে সংক্রমিত হয়েছেন।

মুম্বাইয়ের সিওন হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ড. রেনুকা ব্রাডো জানান, গত দুই মাসে ২৪ জন ছত্রাক সংক্রমিত ভর্তি হয়েছেন, যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১১ জনের একটি চোখ নষ্ট হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। প্রতিদিন ৩ থেকে ৬ জন ছত্রাক সংক্রমিত রোগী আসছেন। যা মহামারিতে দুঃস্বপ্নের মতো।

বেঙ্গালুরুর ড. রঘুরাজ হেজও গত দুই সপ্তাহে ১৯ জন আক্রান্তের কথা জানিয়েছেন।

চিকিৎসকরা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ভয়াবহতা ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবাক হয়েছেন। বিশেষ গত বছরের প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় তা বেড়েছে অনেক।

এই রোগের উপসর্গ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এই ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম লক্ষণ। এছাড়া মুখ অসাড় হয়ে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাশি, জ্বর, মাথা যন্ত্রণার মতো উপসর্গ তো রয়েছেই। এমনকি, শরীরের কোথাও আঘাত লাগলে সেখানেও সংক্রমণ হতে পারে। সেখান থেকে দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ।

রোগ প্রতিরোধের উপায়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্ফোটেরসিন-বি ইঞ্জেকশন প্রয়োজন। তবে তা পাওয়া বেশ কষ্টদায়ক এবং ব্যয়বহুলও। ইঞ্জেকশন প্রতি দাম পড়তে পারে প্রায় ৯ হাজার রুপি। ২১ দিন ধরে রোগীকে এই ধরনের ইঞ্জেকশন দিতে হবে। গুজরাট রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৫ হাজার অ্যাম্ফোটেরসিন-বি ইনজেকশনেরও অর্ডার দেওয়া হয়েছে।