পশ্চিমবঙ্গে একাই বিজেপি সামলাচ্ছেন সেই দিলীপ ঘোষ

এ যেন করোনা মহামারির ছোঁয়া পশ্চিমবঙ্গের বিজেপিতে! একুশের ভোট শেষে লকডাউনের আবহে গেরুয়া শিবিরে একেবারে শ্মশানের স্তব্ধতা। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ, অমিত মালব্য, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা ফিরে গিয়েছেন নিজ গৃহে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছিলেন অরবিন্দ মেনন। তারও পজেটিভ রির্পোট আসার পর তিনিও চলে গিয়েছেন দিল্লিতে। ভোট পরবর্তী অবস্থা সামলাতে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ। কয়েকদিন থেকে তিনিও ফিরে গিয়েছেন। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা নির্বাচনের জন্য আসা রাজস্থানের বিজেপি নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও চলে গিয়েছেন। কার্যত ভাঙা মাঠে বিজেপি শিবির এখন একা কুম্ভের মতো গড় সামালচ্ছেন সেই দিলীপ ঘোষ।

কার্যত অভিভাবকবিহীন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। লকডাউনের জেরে বেশিরভাগ নেতাই গৃহবন্দি। হাতে গোনা কয়েকজন বিধায়ক আর সাংসদ ছাড়া কেউই এখন রাস্তায় নামছেন না। সম্প্রতি রাজ্য দফতরে একটি বৈঠকও ডাকা হয়েছিল। সেখানেও অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন না। জেলা থেকে রাজ্য অনেকে নেতাই ফোন ধরছেন না বলে অভিযোগ করছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। ভোট পরবর্তী সহিংসতায় গৃহহীন কর্মীরা এখন কী করবেন, পরবর্তী দলীয় কর্মসূচি কী- তা জানতে না পেরে দিশেহারা অবস্থা গেরুয়া শিবিরে। এরই মাঝে প্রতিদিন প্রায় নিয়ম করেই সংবাদমাধ্যমে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন দিলীপ ঘোষ। বিধানসভা বন্ধ থাকার কারণে শুভেন্দু অধিকারী মাঝে একবার দু’বার সামনে আসলেও সেভাবে তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না। বিজেপির এই অচল অবস্থার জন্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন দলের মুখপত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘আমাদের কাছে এখন কর্মীদের ঘরে ফেরানোটাই প্রধান কাজ। কিছু মানুষ ভুলে গিয়েছেন, রাজ্যে এখন রাজনৈতিক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। যার অন্যতম উদ্দেশ্য, বিজেপিকে আটকানো।’

এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক পরিবর্তনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, মর্মান্তিক হারের দায়ে সরে যাচ্ছেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তার পরিবর্তে শোনা যাচ্ছে রাজস্থানের রাজ্যসভার সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব ও বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘের নাম। বিজেপি মহলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আমেথির সাংসদ স্মৃতি ইরানির নামও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার কারণে তার এই পদে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বিজেপি সূত্রের খবর, আপাতত এই দৌড়ে এগিয়ে আছেন অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ ভূপেন্দ্র যাদবই। কবে তাদের নিয়োগ হবে এখন তার দিকে তাকিয়ে গেরুয়া কর্মীরা।

গেরুয়া শিবিরের এই ভাঙা হাটেও জ্বলজ্বল করছেন গুটি কয়েক নেতা। গত ১৬ মে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রবিবার সকালে শিলিগুড়িতে ধর্নায় বসেন বিজেপির তিন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, শিখা চট্টোপাধ্যায় ও আনন্দময় বর্মণ। লকডাউন অমান্য করার জন্য তারা গ্রেফতারও হন। লকডাউনের মধ্যে যাতে রোগীর বাড়ি থেকে হাসপাতাল যেতে সমস্যা না হয় তাই বাঁকুড়া সাংসদ ডা. সুভাষ সরকার ও বাঁকুড়া বিজেপির উদ্যোগে চালু হয়েছে আপদকালীন বিনামূল্যে টোটো পরিষেবা। বিনামূল্যে আপদকালীন ভ্রাম্যমাণ অক্সিজেন পরিষেবা শুরু করেছেন তিনি। নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আন্দনময় বর্মন এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ নকশালবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে করোনা মোকাবিলার জন্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী তুলে দিয়েছেন।

রায়গঞ্জ শহরের সাধারণ মানুষকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার তুলে দিয়েছেন রায়গঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। পুরুলিয়া বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় লকডাউনে পথচারি ও গরীবদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। খড়গপুর সদরের বিধায়ক এবং অভিনেতা হিরণ চ্যাটার্জীও খাবার এবং মাস্ক তুলে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। এলাকার মানুষের জন্য হেল্পলাইন চালু করছেন তিনি। তৈরি করছেন 'কুইক রেসপন্স টিম'। সেখানেই অভিনেতা তথা বিধায়কের টিম যেকোনও সাহায্যে এগিয়ে আসবে সাধারণ মানুষের পাশে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য অক্সিজেন থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। গরিব ও মেধাবীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবে বিধায়ক হিরণের এই কুইক রেসপন্স টিম। বালুরঘাট বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক ডা. অশোক কুমার লাহিড়ী করোনা মোকাবিলায় ২০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক বালুরঘাট হাসপাতালে দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র করোনা মৃত মানুষদের দাহ করার কাজ করছেন। দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপকুমার সাহা করোনা মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুবরাজপুর শহরের মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন।

এত হতাশার মধ্যে বঙ্গ বিজেপি আশার আলো বাঁচিয়ে রেখেছেন এরাই, এমনটাই বলছেন গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা।