অবশেষে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু ভারতের

নিজেদের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে এলো ভারত। প্রথমবারের মতো আফগান তালিবানের কোনও গোষ্ঠী এবং নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে দিল্লি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা হিন্দুস্তান টাইমসকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালিবানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই আফগানিস্তান থেকে ক্রমেই সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে অন্তত অর্ধেক মার্কিন সেনাসদস্যকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সূত্রের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-র উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর করা তালিবান নেতা মোল্লা বরাদরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে দিল্লি।

নাম গোপন রাখার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে তারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, পাকিস্তান ও ইরানের মদদ পাওয়া তালিবান নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে না। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর মদতপুষ্ট হক্কানি বা কোয়েটা সুরার সঙ্গেও কোনও রকম আলোচনায় যেতে নারাজ দিল্লি। তালিবানের যে গোষ্ঠীগুলি ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে পরিচিত, তাদের জন্যই আলোচনার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। যা গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। তাতে বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।

এতোদিন কোনওভাবেই তালিবানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চাইতো না ভারত। ৯০-এর দশকে তালিবান শাসনের সময় তাজিকস-সহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর তৈরি সংযুক্ত ফ্রন্টের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তালেবানকে যুক্ত না করার যে পূর্ববর্তী অবস্থান ছিল এবং নর্দান জোটে যাবতীয় নজর দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি আমরা।’

নয়া পদক্ষেপ নিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অনেকেই মনে করছে যে, তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ভালো।’

কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-সহ দেশটির আনুষ্ঠানিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সমান্তরালভাবে তালেবানের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাবে দিল্লি।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন আচমকা দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে এলো ভারত? গেটওয়ে হাউসের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক ফেলো সমীর পাটিলের মতে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তার ভাষায়, ‘রাজনৈতিক নিষ্পত্তি ছাড়া কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তানে যুদ্ধ নিশ্চিত। সেই সঙ্গে নিশ্চিত যে কাবুল দখল করবে তালেবান। তাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতেই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত।’

তিনি বলেন, ‘তালেবানদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে যেভাবে অনিচ্ছা দেখিয়ে এসেছে ভারত, তা থেকে সরে এসে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। একমাত্র এভাবেই দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা কমিয়ে আনা সম্ভব।’