পশ্চিমবঙ্গে আটক কে এই চীনা অনুপ্রবেশকারী?

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত প্রায় দুই হাজার ২১৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে বড় অংশেই কোনও বেড়া নেই। পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে যাওয়া বাংলাদেশি আটক ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) কাছে সাধারণ ঘটনা। তবে ৩৬ বছর বয়সী চীনা নাগরিক হান জুনওয়ের মতো কাউকে এই সীমান্ত থেকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আটক করা কোনও সাধারণ বিষয় নয়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে এই চীনা নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

যেভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন এই চীনা নাগরিক

মালদা জেলার মালিক সুলতানপুর বর্ডার আউটপোস্টে বিএসএফ’র হাতে আটক হন চীনা নাগরিক হান জুনওয়ে। তিনি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করেন আর বিএসএফ চ্যালেঞ্জ করলে দৌড় শুরু করেন। পরে তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোহাদিপুর বর্ডার আউটপোস্টে নেওয়া হয়।

তার সঙ্গে কী পাওয়া গেছে?

হান জুনওয়ের কাছে লুকিয়ে রাখা ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ সামগ্রী পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে একটি অ্যাপল ল্যাপটপ, দুইটি আইফোন, দুইটি চীনা সীম এবং একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় সিম কার্ড, দুইটি পেনড্রাইভ, দুইটি ছোট টর্চ, তিনটি ব্যাটারি এবং পাঁচটি অর্থ আদানপ্রদানকারী ম্যাশিন পাওয়া গেছে।

এছাড়াও তার কাছে দুইটি মাস্টারকার্ড এটিএম কার্ড, কিছু মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকা এবং ভারতীয় রুপিও পাওয়া গেছে।

হান জুনওয়ে কি চীনা গুপ্তচর?

তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে তাকে দেখে ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে মনে হচ্ছে। ইংরেজিতে তিনি স্বাচ্ছন্দ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে যেসব ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে তাতে তার চীনা সংস্থার হয়ে গোয়েন্দাগিরি করবার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

তার পাসপোর্টে দুই দেশের ভিসা রয়েছে। একটি বাংলাদেশের আরেকটি নেপালের। ভারতের সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, হান জুনওয়ে ভারত-বাংলাদেশের এমন সীমান্ত ব্যবহার করেছেন যেখানে নজরদারি কম। ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ তার জন্য বেশি সহজ ছিলো।

ভারতের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তার কাছে নেপালের ভিসাও ছিলো কিন্তু মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছেন। তদন্তে দেখা যাচ্ছে সাইবার জালিয়াতির চেয়ে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে তার জড়িত থাকার আশঙ্কাই বেশি। তার কাছে এমন সব নথি পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি ভারতে রয়েছেন তা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। আগে থেকেই তার সম্পর্কে জানতো লখনৌ এর এটিএস।’

কর্মকর্তারা বলছেন, হান বিএসএফ তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে জানায় ছোটখাটো সাইবার অপরাধ করতে ভারতে আসেন তিনি। তবে তার বক্তব্যে ব্যাপক অসঙ্গতি পাওয়া যায়।

এই গ্রেফতার কেন গুরুত্বপূর্ণ?

কর্মকর্তারা বলছেন হান দাবি করেছেন তিনি ব্যবসা করতে ভারতে প্রবেশ করেন। তবে তার আসল উদ্দেশ্য এখনও রহস্যপূর্ণ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হানের কাছ থেকে বেশ কিছু রহস্যজনক ব্যাংক ডকুমেন্টও পাওয়া গেছে। বিএসএফ’র হাতে গ্রেফতার হওয়ার তিন দিন পর এসব ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। বিএসএফ সদস্যরা ধাওয়া দিলে এগুলো ফেলে দিয়ে দৌড় শুরু করেন তিনি।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি গত দেড় বছরে হান জুনওয়ে প্রায় এক হাজার তিনশ’ ভারতীয় সীম কার্ড চীনে পাঠিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ভারতের সরকারি ওয়েবসাইট, নিরাপত্তা সংস্থা এবং ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালানোর অংশ হিসেবে এসব সীম সংগ্রহ করেছেন।

আগে ভারতে আসলে কী করেছেন হান?

হান জুনওয়ে আগেও কয়েকবার ভারতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। যদিও তার কাছে পাওয়া পাসপোর্টে কেবল একটি দেশেরই সিল রয়েছে- সেটি বাংলাদেশের। আগের সফরগুলোর জন্য আলাদা পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে।

তার ভারতে আসার উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। তদন্তকারীদের হান জুনওয়ে জানিয়েছেন, তিনি ব্যবসা করতে ভারতে আসেন। তাকে ইতোমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বিএসএফ, এনআইএ এবং মালদা পুলিশ। আর এখন তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হেফাজতে রয়েছেন।

তদন্তকারীদের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, স্পষ্টত তিনি কেবল ব্যবসা করতে ভারতে আসেননি। পশ্চিমবঙ্গ এসটিএফ-এর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে উত্তর প্রদেশের এটিএস-এর কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস