সিপিএমে তারুণ্যের জয়গান

শেষ পর্যন্ত কি বিদায় ঘণ্টা বাজতে চলেছে ভারতের সিপিএমে পলিটব্যুরোতে থাকা প্রবীণদের! ভারচুয়ালি চলা তিনদিন ব্যাপী সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের গত রবিবার শেষদিনে আলোচনায় বলা হয়েছে, ৭৫ বছরের উপরে থাকা প্রবীণ নেতাদের এবার পলিটব্যুরো থেকে অবসরে পাঠানো হবে। দলে নবীনদের সামনে আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সিপিএম। এমনটাই সূত্রের খবর। আর এই সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয় তাহলে পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু, হান্নান মোল্লারা বাদ পড়তে চলেছেন।

যদিও সিপিএমে এই ভাবনা নতুন নয়। এর আগেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি সিপিএম-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকেও প্রস্তাব এসেছিল, নতুন রাজ্য কমিটির সদস্যদের বয়স ৭৫-এর মধ্যে হতে হবে। যাদের বয়স ৭৫ বছরের কম কিন্তু শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অসমর্থ তাদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া উচিত। গত কয়েক বছর ধরে এই ভাবনা কাজ করলেও ২০১৮-তে হায়দরাবাদে ২২তম পার্টি কংগ্রেসে তা অনুমোদন পায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত দলের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কমিটিগুলোতে থেকে যাওয়ার সুযোগ পান ৭৫ এর প্রবীণরা।

কিন্তু সেদিনের পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। ভারতে যে তিনটি রাজ্যে সিপিএমের সরকার ছিল, আজ আর তা নেই। একমাত্র কেরালা সরকারের আছেন তারা। একুশের বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বামের একটি বিধানসভা আসন না পেয়ে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্ব হারিয়েছে। ত্রিপুরায় দলের অবস্থা ভাল নয়। সেখানেও বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে দ্রুত উঠে আসছে।

একদা প্রাক্তন সিপিএম নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লা দাবি তুলেছিলেন, ‘পাকা চুল নয়। আনতে হবে কাঁচা চুলের জোয়ানদের, না হলে দল বাঁচানো যাবে না’।’এমতবস্থায় রেজ্জাক মোল্লার মতকেই প্রাধান্য দিতে চলেছে সিপিএম। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।

কিন্তু এই পথে কতটা সফল হবে সিপিএম? তা নিয়েও প্রশ্ন আছে রাজনৈতিক মহলের। দীর্ঘদিন ধরেই দলের মধ্যে ‘বৃদ্ধতন্ত্রের’ অভিযোগও ছিল। বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও প্রার্থী করার জন্য ছাত্র-যুবকদের প্রতিনিধির সংখ্যা সিপিএমে আশানুরূপ ছিল না কখনও। একুশের বিধানসভা ভোটে আলিমুদ্দিনের কর্তারা এই পথ থেকে সরে এসে একঝাঁক নবীন মুখকে প্রার্থী করেছিল। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে সিপিএমের এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। যার ফলে নবীন মুখকে দাঁড় করিয়েও জনগণের মনে দাগ কাটতে পারেনি সিপিএম। সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্যই বাংলাসহ দেশের সর্বত্র সিপিএম আজ তার সমর্থন হারিয়েছে। এ অবস্থায় আগামী বছর কেরালার কান্নুরে হওয়া পার্টি কংগ্রেসে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হলে সিপিএম কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা নিয়ে সংশয়ে রাজনৈতিক মহল।