কলকাতার পুজোয় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা, সতর্কতা জারি

শুরু হয়ে গেছে কাউন্ট ডাউন। করোনা আবহের মধ্যেই পশ্চিবঙ্গের বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর আয়োজন সম্পন্ন কলকাতা মহানগরীতে। এরই মধ্যে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় সর্তকতা জারি হলো। আর এর জেরেই পুজোর দিনগুলোতে সর্বোচ্চ সর্তকতা এবং কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিলো রাজ্যের সচিবালয় নবান্ন। এমনটাই প্রশাসন সূত্রের খবর।

সূত্র মতে, প্রতি বছরই উৎসবের মৌসুমে সক্রিয় হয়ে উঠে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মদতপুষ্ঠ ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। উৎসব চলাকালীন জনবহুল এলাকা ওগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে তারা টার্গেট করে নাশকতা চালানোর জন্য। কলকাতার দুর্গাপুজোয় মানুষের ঢল নামে। করোনা পরিস্থিতিতে বিধি-নিষেধ থাকলেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছে প্রশাসন। আর সেজন্যই নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। পুজো মণ্ডপসহ জনবহুল এলাকাগুলোর ভিড় এবং বিসর্জনের সময় বিশেষ নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গোয়েন্দাদের চিন্তা বাড়িয়েছে আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখল আর ইসলামিক স্টেট খোরাসানের উত্থান।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এই সময়কালের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো দেশের মধ্যে থাকা তাদের স্লিপার সেল ব্যবহার করে নাশকতা চালাতে পারে। স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্রে জানা গেছে, এই উৎসবের মৌসুমে যাতে সর্বাধিক আঘাত হানা যায় তার জন্য হামলার ছক কষছে তারা। তাই আগেভাগেই কলকাতাসহ রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর।

এদিকে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এবার পুজো মণ্ডপে বেশি সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে। স্বেচ্ছাসেবকরা যেনও বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লেই অবিলম্বে তা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেকোনও ধরণের জঙ্গি নাশকতা ঠেকাতে পুলিশি নজরদারির পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতার ওপরও নির্ভর করছে প্রশাসন। আর সেই কারণেই করোনার বিধি-নিষেধ পালন হচ্ছে কিনা তা দেখার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের পুজো মণ্ডপ এবং তার আশপাশের এলাকায় নজরদারি চালানোর কথা বলা হয়েছে। কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলেই দ্রুতই তা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি বড়ো পুজো এবং জনবহুল এলাকায় সিসিটিভির পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ারে কড়া নজরদারি চালাবেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, পুজো কমিটিগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বড়ো পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপ থেকে ১০ মিটার এবং ছোট পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত ‘নো এন্ট্রি জোন’ করতে হবে। ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ কোনোভাবেই ঢুকতে পারবেন না দর্শকরা। পুজায় অঞ্জলি, আরতি, সিঁদুর খেলার আয়োজন করতে হবে আদালতের নির্দেশ মেনে।

ইতিমধ্যে কলকাতার বড়ো পুজোগুলোর উদ্ধোধন হয়ে গিয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকলেও বৃষ্টি থামলেই মানুষজন মণ্ডপমুখি হওয়া শুরু করে দিয়েছেন। চতুর্থীর বিকেল থেকে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ ব্যাপক ভিড় দেখা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে পুজোর কেনাকেটা করতে শহরের বিভিন্ন শপিংমলসহ ধর্মতলা-গড়িয়াহাট-শ্যামবাজার-হাতিবাগানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এইসব এলাকায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সামলাতে হিমশিম অবস্থা কলকাতা পুলিশের কর্মীদের। যানজট ও ভিড় মোকাবিলায় তাই শনিবার থেকেই রাস্তায় থাকছে অতিরিক্ত পুলিশ।